দিদিমনি যতই শয়ে শয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করুন, যতই কন্যাশ্রী, যুবশ্রী করে বেড়ান, যতই দাক্ষিণ্য বিলিয়ে যান, এই পথে ভোট হয় না, সেটা সবথেকে ভাল বোঝেন এই অনুব্রতই। তাই ‘উন্নয়ন’ তত্ত্বকে এভাবে কেউ বিবস্ত্র করেননি। উন্নয়নকে এত অনাস্থা এর আগে কেউ জানাননি। লিখেছেন ধীমান সাহা।
প্রায় সবার মুখে এক বুলি। রাজ্য সরকার এত উন্নয়ন করেছে, বিরোধীরা প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না। শাসকদলের সব নেতা–মন্ত্রীকে এই কথাই বলে যেতে হচ্ছে। পেটোয়া মিডিয়ারও অন্য কিছু বলার উপায় নেই। সন্ধের টিভি বুদ্ধিজীবীদের অনেকের মুখেই এই সুর।
উন্নয়ন দিয়ে যে জেতা যাবে না, সেটা সবথেকে ভাল বোঝেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি এই ‘উন্নয়ন’ এর এমন প্রতিশব্দ হাজির করেছেন, যা এর আগে বাংলার ইতিহাসে কেউ করেননি। অভিধান রচয়িতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ভাষাচার্য সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, সবাই অসহায় অনুব্রতর কাছে। উন্নয়ন শব্দের এমন প্রতিশব্দ তাঁরাও জানতেন না।
অনুব্রতর হুমকি, রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকবে। এভাবে উন্নয়নকে কেউ কখনও রাস্তায় নামাননি। আর উন্নয়ন যে কার্যত একটা হুমকি, এমনটাও কেউ বোঝাতে চাননি। আসলে, অনুব্রত ‘সহজ সরল’ মানুষ। বাকিদের মতো এত প্যাঁচালো নন। তিনি সারসত্যটা জানেন, যতই উন্নয়ন–উন্নয়ন ঢাক পেটানো হোক, এই ঢাকে ভোট আসে না। মাত্র বছর দুই আগে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুটি নতুন কথা বাজারে ছেড়েছিলেন অনুব্রত। গুড় বাতাসা এবং চড়াম চড়াম ঢাক। চেষ্টার কসুর রাখেননি। পুলিশকে কার্যত বসিয়ে রেখে ঢাক বাজিয়ে গেছেন, গুড় বাতাসা বিলিয়ে গেছেন। কিন্তু এত কাণ্ড করেও নানুর আর হাসনে পরাজয়। ভাগ্যিস সত্যিটা বুঝেছিলেন, নইলে আরও কয়েকটা আসনে হার নিশ্চিত ছিল।
এবারও। বিরোধীশূন্য না করলে জেলা পরিষদের অবস্থা কী দাঁড়াত, কেষ্টবাবু বেশ ভাল জানেন। তাই কোনও ঝুঁকি নেননি। তাঁর নিজের ফর্মুলায় তিনি প্রথমে ৪১ টি, পরে ৪২ টি আসনেই জিতে নিলেন। ভোট আবার কী? উন্নয়ন লাঠি হাতে, অস্ত্র হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। ব্যাস, আর কোনও কথা হবে না।
দিদিমনি যতই শয়ে শয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করুন, যতই কন্যাশ্রী, যুবশ্রী করে বেড়ান, যতই দাক্ষিণ্য বিলিয়ে যান, এই পথে ভোট হয় না, সেটা সবথেকে ভাল বোঝেন এই অনুব্রতই। তাই ‘উন্নয়ন’ তত্ত্বকে এভাবে কেউ বিবস্ত্র করেননি। উন্নয়নকে এত অনাস্থা এর আগে কেউ জানাননি।
অনুব্রতর উন্নয়ন একটু অন্যরকম। সেখানে দিদিমনির উন্নয়ন বড়ই ফ্যাকাসে। সত্যিটা বেআব্রু করে দেওয়ার জন্য অনুব্রতকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যায়।