স্বরূপ গোস্বামী
লাল হলুদ কর্তারা চাইছেন, খালিদ জামিল যেন নিজে থেকে কলকাতা ছেড়ে চলে যান। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন, যেন সম্মান বাঁচাতে খালিদ নিজেই পদত্যাগ করেন। আর এই ‘খেলা’য় তাঁদের অস্ত্র সুভাষ ভৌমিক। তাঁকে সামনে রেখেই যেন সাজানো হচ্ছে চিত্রনাট্য।
খালিদ জামিল তো ইস্টবেঙ্গলের কোচ হওয়ার জন্য কান্নাকাটি করেননি। লাল হলুদ কর্তারাই তাঁকে কোচ করে এনেছিলেন। এখন রাতারাতি খালিদ খারাপ কোচ হয়ে গেল? আসলে, এই কর্তারা বরাবর চমক দেওয়ায় বিশ্বাসী। যেই খালিদ জামিল আইজল এফসি–কে চ্যাম্পিয়ন করলেন, অমনি লাল হলুদ কর্তাদের মনে হল, তাকে ভাঙিয়ে আনলে কেমন হয়! যেন চ্যাম্পিয়নকে বেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ভাঙিয়ে আনলেই সব হয়ে যাবে।
কোচ হিসেবে খালিদ জামিল কেমন, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। তাই বলে যে অসম্মান তাঁকে করা হচ্ছে, এটা তাঁর প্রাপ্য নয়। এই খালিদের কোচিংয়েই এবার ইস্টবেঙ্গল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতেই পারত। শেষ রাউন্চ পর্যন্ত তুল্যমূল্য লড়াই হয়েছে। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত! তাহলে তো মাথায় তুলে নাচতেন। তাহলে তো সামনের মরশুমেও তাঁকেই রাখা হত। তখন তিনি কেমন কোচ, তাঁর স্ট্র্যাটেজিতে কী গন্ডগোল আছে, তা নিয়ে আলোচনাও হত না।
দল চ্যাম্পিয়ন হল না। কর্তাদের আর তর সইল না। যেন এক্ষুনি সুভাষ ভৌমিককে এনে ফেললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সুভাষ ভৌমিককে ডেকে এনেছেন, ভাল কথা। সামনের মরশুমে তাঁকে দিয়ে দল তৈরি করান, আরও ভাল কথা। সামনের মরশুমে খালিদকে না রাখতেই পারেন। কিন্তু এখন এই অসভ্যতা কেন? কোচ আর টিডিকে নিয়ে রোজ অশান্তির আবহ কেন? দল প্র্যাকটিস করছে, কোচ দরজা বন্ধ করে ড্রেসিংরুমে বসে আছেন। টিডি প্রকাশ্যেই বলছেন, কোচকে মাঠে নামতে দেব না। দুজনের কথাবার্তা নেই। ফুটবলাররা ভয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। কখন প্র্যাকটিস, কোচ জানেন না। ইস্টবেঙ্গলে এমন পরিবেশ কেন? এই নোঙরামির আবহ কারা ডেকে আনছেন? কারা ইন্ধন দিচ্ছেন?
কর্তারা মনে প্রাণে চাইছেন, খালিদ নিজেই যেন ছেড়ে চলে যান। কর্তাদের যদি খালিদকে এতটাই অপছন্দ, তাঁকে সেটা বুঝিয়ে বললেই হয়। এটা নিয়ে তো তাঁর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। খালিদকে বুঝিয়ে বললে তিনি নিজেই হয়ত পদত্যাগ করবেন। একে বেশ কয়েকমাসের টাকা দিতে পারেননি। সেই লজ্জা ঢাকতে এই অসভ্যতা করা কি খুব জরুরি? ইস্টবেঙ্গলের সুনাম বাড়ছে? কলকাতা ফুটবলের সুনাম বাড়ছে? বাইরের কোচেদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, একবারও ভেবে দেখলেন না?
ইস্টবেঙ্গল কর্তারা চেয়েছিলেন, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে খালিদের পেছনে লেলিয়ে দিতে। বিশেষ সুবিধা হয়নি। মনোরঞ্জনকে দিয়ে এই অসভ্যতা করানো যেত না। যেটা মনোরঞ্জনকে দিয়ে করানো যায়নি, সেটা সুভাষ ভৌমিককে দিয়ে করানো যাচ্ছে। এই সুভাষ ভৌমিক একসময় কর্তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন। খেলোয়াড়দের অমার্যাদা হলে প্রতিবাদ করতেন। ভাবতে খারাপ লাগছে, সুভাষ ভৌমিকের মতো মানুষ আজ ক্লাবর্তাদের ইন্ধনে এই নোঙরা খেলায় জড়াচ্ছেন! নিজে একজন কোচ হয়ে আরেকজন কোচকে এভাবে অপদস্থ করছেন? না, এটা সুভাষ ভৌমিককে মানায় না।