শুভেন্দু মণ্ডল
ভেবে দেখলাম, ময়নাগুড়ির সেই ‘স্বনামধন্য’ শিক্ষক হরিদয়াল রায়কে বঙ্গভূষণ দেওয়াই যায়। এমনকী জাতীয় পুরস্কারও দেওয়া যায়।
চারিদিকে কান পাতলেই তাঁর নামে কত নিন্দে, কত সমালোচনা। কাগজজুড়ে তিনি। টিভির আলোচনায় তিনি। এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি চর্চা বোধ হয় তাঁকে নিয়েই। একজন শিক্ষককে নিয়ে এমন আলোচনা, শিক্ষককূলের গর্ব করা উচিত।
তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ কী? ১) তিনি প্রশ্ন খুলে মেধাবী ছাত্রদের বলে দিতেন। বেশ করতেন। ছাত্রকে সাহায্য করাই তো শিক্ষকের কাজ। সারা বছর ধরে ছাত্রকে পড়ানো হয় কেন? যেন পরীক্ষার সময় সে ঠিকঠাক উত্তর লিখতে পারে। এই শিক্ষক তো সেটাই চেয়েছেন। কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছেন।
২) তিনি নাকি আগেও এরকম করে স্কুলকে মেধা তালিকায় এনেছেন। বেশ করেছেন। সব শিক্ষকই তো চান তাঁর স্কুল মেধা তালিকায় আসুক। তিনিও চেয়েছেন। তার জন্য যা যা করার, করেছেন। শিক্ষকের কৃতিত্বে ছাত্র বোর্ডে স্ট্যান্ড করছে, এ তো শিক্ষকদের কাছে গর্বের বিষয়।
৩) তিনি নাকি জাতীয় পুরস্কারের জন্যই এইসব কাণ্ড করেছেন। তাহলে ভেবে দেখুন। অন্য অনেকেই লবি করে বা লোক ধরে জাতীয় পুরস্কার পান। তিনি সেই পথে হাঁটেননি। তিনি চেয়েছেন, স্কুলের নাম আরও উজ্জ্বল হোক। আগে স্কুল গর্বিত হোক, তবেই আমি জাতীয় পুরস্কার নেব। ভেবে দেখুন, স্কুলের প্রতি কতখানি দরদ!
৪) তিনি নাকি আরও দশজন শিক্ষককে সামিল করেছেন। তাঁদের দিয়ে উত্তর লেখাতেন। ছাত্রদের পাঠানো হত। এ তো আরও ভাল কাজ। কৃতিত্ব একা নিতে নেই, সবাই মিলে ভাগ করে নিতে হয়। চারিদিকে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। তিনি বাকি শিক্ষকদেরও সেই কর্মযজ্ঞে সামিল করেছেন।
৫) আরে বাবা, দ্রুত উত্তর লিখতে গেলে শিক্ষকদেরও চর্চা দরকার। নিয়মিত চর্চা না থাকলে এভাবে দ্রুত উত্তর লেখা যায় না। এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষকদের চর্চায় রেখেছিলেন। দ্রুত উত্তর লিখতে হবে, এটা ভেবে শিক্ষকরা নিজেদের আপ টু ডেট রাখতেন। সহকর্মীদের এভাবেই উজ্জীবিত করতে হয়।
৬) শিক্ষকরা যতই পড়ান, ছাত্ররা ভুলে যায়। ভাল রেজাল্ট করলে নিজের কৃতিত্ব বলে দাবি করে। কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবদানকে অস্বীকার করা যাবে? ছাত্ররা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। ছাত্র–শিক্ষক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে চেয়েছিলেন এই হরিদয়াল রায়।
৭) তাঁর নাকি তিন খানা ফ্ল্যাট, চারখানা গাড়ি। ভেবে দেখুন, তিনি প্রোমোটার নন, শিল্পপতি নন, নেতা নন। শুধু শিক্ষকতা করে চারখানা বাড়ি করতে পারলে মন্দ কী? যে শিক্ষকরা মাত্র কটা টাকা ডিএ পাচ্ছেন না বলে কাঁদুনি গাইছেন, তাঁরা দেখুন হরিদয়ালবাবুকে। শিক্ষকতা করেও কীভাবে এমন বিত্তশালী হওয়া যায়, তার উপায় শিখে নিন ময়নাগুড়ির সেই প্রধান শিক্ষককে। সব ‘অনুপ্রেরণা’র পেটেন্ট বিশেষ একজন নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু এই হরিদয়ালবাবুরাও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতেই পারেন।