সমন্বয় বর্ধন
কলকাতা জেলা কমিটির ভোটাভুটি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানা কথা। আমি নিজেও একজন বাম মনষ্ক। এই কঠিন সময়েও আনুগত্য হারিয়ে ফেলিনি। উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিলও হইনি। আমার মনে হয়, সম্মেলনে যা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানানো উচিত। অন্যান্য জেলাও যদি এমনটা দেখা যেত, তাহলে বোধ হয় ভাল হত।
দলের সবকিছু দলের ভেতর কুক্ষিগত রাখতে গিয়েই মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়েছি। মানুষের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারিনি। এবার অন্য রকমভাবে ভাবার সময় এসেছে। সুসময়ে সংস্কার করা যায় না। সংস্কারের কাজ খারাপ সময়েই শুরু করতে হয়।
বিভিন্ন জেলায় বছরের পর বছর অফিসিয়াল প্যানেল পাস করানো হয়েছে। অর্থাৎ, চাপিয়ে দেওয়া নাম মেনে নাও। অন্য সুরে কথা বোলো না। আলোচনার সময় সমালোচনা হোক। কিন্তু কমিটি গঠনের সময় শৃঙ্খলা মানো। যেসব নাম প্যানেলে আছে, সেগুলোতেই হাত তোলো। এভাবেই কেমন যেন একটা যান্ত্রিক কাঠামো চলে এসেছে। বিভিন্ন জেলার ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যাচ্ছে।
অনেকক্ষেত্রেই দেখেছি, কর্মীরা যা চাইছেন, আর নেতারা যা চাইছেন, তার মধ্যে বিরাট এক ফারাক থেকে যাচ্ছে। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা থাকা যেন অপরাধ। মানুষের সঙ্গে যাঁরা খোলামনে মেলামেশা করেন, দলের ভেতর তারা ব্রাত্য। আবার দল যাদের বিভিন্ন কমিটিতে আনে, মানুষের সঙ্গে তাদের কোথায় যেন একটা দূরত্ব। আমার মতো অনেকেই হয়ত এই বিষয়টা লক্ষ করেছেন। এই কারণেই দূরত্ব বেড়েছে।
আমার মনে হয়, কলকাতা জেলা সম্মেলন একটা পথ দেখাল। সরাসরি ভোট হল। কমিটির সদস্যরা জেলা সম্পাদক বেছে নিলেন, মন্দ কী? এতে পার্টি ভেঙে যায় না। বরং ভেতরের গণতন্ত্র আরও মজবুত হয়। জেলা কমিটি কী চাইছে, অন্তত সেই বার্তাটা সামনে এল। অন্যান্য জেলাতেও যদি এমনটা হত, তাহলে বোধ হয় ভাল হত। কারণ, অনেক জায়গাতেই এমন কাউকে কাউকে জেলা সম্পাদক করা হয়েছে, যাঁরা হয়ত সেই পদের যোগ্য নন। রাজ্য সম্পাদক নিয়ে বিতর্ক নেই। সেখানে সূর্যবাবুই যোগ্যতম, এ নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু জেলায় জেলায় ছবিটা অন্যরকম।
তাই ভোটাভুটি দেখে গেল গেল রব তোলার কিছু নেই। বরং, গণতন্ত্রের পক্ষে এটা আরও একটা ধাপ। কেন্দ্রীয় কমিটি বা পলিটব্যুরোতে যদি ভোটাভুটি হয়, তাহলে জেলা কমিটিতে হতে বাধা কোথায়? তবে এই রেশ যেন দ্রুত মিলিয়ে যায়, সবাই যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, এই পরিবেশটাও তৈরি করতে হবে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব। ওপেন ফোরামে এই নিয়ে সুস্থ বিতর্ক চলতেই পারে। আপনিও মতামত জানাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)