চৌরঙ্গীর রিমেক! নন্দ ঘোষের কানে পৌঁছে গেছে। সৃজিত মুখার্জি বা প্রসেনজিৎকে নয়। স্বনামধন্য নন্দ ঘোষ ‘প্রেমপত্র’ দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন লেখক শঙ্করকে।
নন্দ ঘোষের কড়চা
মণিশঙ্কর নাম থেকে মণি খসিয়ে আপনি শঙ্কর হয়েছিলেন। তাতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি। কারণ, নামে মণি না থাকলেও বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে আপনি অবশ্যই এক মূল্যবান মণি। কিন্তু বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার কি মাথা খারাপ হল? এত খ্যাতি পাওয়ার পরেও আপনি কি আরও খ্যাতির লোভে পড়েছেন? নাকি সৃজিত মুখোপাধ্যায় নামক একটি পুচ্ছপাকা পরিচালকের প্রতি করুণা দেখাতে গিয়ে নিজের সুনামের প্রতি অবিচার করছেন?
দেখুন শঙ্করবাবু, আপনার প্রতি বা আপনার রচনার প্রতি আমার কোনও রাগ নেই। কিন্তু চৌরঙ্গী সিনেমার রিমেক করার অনুমতি দেওয়ার জন্য তীব্র রাগ আছে। আপনি কি ভাবেন, আপনার রচনা শুধু আপনার একার? তার ওপর আমাদের কোনও অধিকার নেই? তাহলে কোন আক্কেলে সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে চৌরঙ্গী সিনেমা করার অনুমতি দিলেন? শুনেছি, সত্যজিৎ রায় সীমাবদ্ধ করার পরেও আপনার কোনও একটি উপন্যাস থেকে সিনেমা করতে চেয়েছিলেন। আপনি রাজি হননি। সেই আপনিই অনুমতি দিলেন সৃজিতকে! আপনি কি ভাবলেন সৃজিত মুখুজ্জে সত্যজিতের থেকে ভাল সিনেমা বানাবে? নাকি ভাবলেন, অল্প বয়সে ছোঁড়ার গোফ দাড়ি পেকে গেছে। পুরস্কার–টুরস্কার পেয়েছে। যা খুশি করছে করুক।
কিন্তু যা খুশি করুক বললে তো হবে না। সৃজিত করবে চৌরঙ্গী। প্রসেনজিৎ করবে স্যাটা বোস। এই দৃশ্য দেখে আপনি বিগলিত হতে পারেন। আমি নন্দ ঘোষ চুপ করে থাকব না। আসলে, উত্তম কুমারের পেছনে লাগার একটা পুরনো ব্যামো এই সৃজিত–প্রসেনজিৎ জুটির আছে। সৃজিতের কেরিয়ার শুরুই হয়েছিল অটোগ্রাফ সিনেমা দিয়ে। সেটি সত্যজিৎ পরিচালিত উত্তম কুমার অভিনীত নায়ক সিনেমার টুকলি। দর্শকদের জিজ্ঞেস করুন, ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটি ছাড়া সিনেমার কোনওকিছুই কারও মনে নেই। এরপর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির অনুকরণে বানানো হল জাতিস্মর। উত্তম কুমারের অনুকরণে অ্যান্টনি হল প্রসেনজিৎ। সে যে কেমন সিনেমা হয়েছিল, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। সুমনের গানগুলো ছাড়া কোনওকিছুই পাতে দেওয়ার মতো নয়। পুরস্কার যা এল, গানের জন্যই। বাকিটা ফ্লপস্য ফ্লপ।
মাঝে কিছুদিন কাকাবাবু–কাকাবাবু খেলার পর এই জুটি আবার উত্তম কুমারের পেছনে লেগেছে। এবার টার্গেট চৌরঙ্গী এবং স্যাটা বোস। এই উদ্যোগ বন্ধ করতে পারতেন সুপ্রিয়া দেবী। তিনি যদি রান্না করার ফাঁকে ফাঁকে গরম খুন্তি নিয়ে এই দুই মহাপণ্ডিতের অকুস্থলে ছ্যাঁকা দিতেন, তাহলে রোগ প্রাইমারি স্টেজেই সেরে যেত। কিন্তু তিনি যখন তা করেননি, এবং অনিবার্য কারণবশত আর করার সম্ভাবনাও নেই, তখন এই উদ্যোগ শঙ্করবাবুকেই নিতে হবে। শঙ্করবাবু, আপনি চৌরঙ্গীর রিমেকের অনুমতি ফিরিয়ে নিন। যদি আপনি এই কাজ না করেন, তাহলে এ ব্যাটারা ধাপে ধাপে সপ্তপদী, হারানো সুর সবকিছুর রিমেক করবে। ওগো বধূ সুন্দরীর রিমেকটা হয়ত এখনই করবে না। কারণ, তাতে নায়কের প্রয়াণের আশঙ্কা আছে। কিন্তু ওই সিনেমাটি বাদ দিলেও উত্তম কুমারকে দ্বিতীয়বার মৃত্যুমুখে প্রেরণ করার জন্য এঁরা যথেষ্ট। শঙ্করবাবু, আপনার প্রতি আমাদের অনেক আশা। আপনার চৌরঙ্গী উপন্যাস এবং চৌরঙ্গী সিনেমা ইতিমধ্যেই কালজয়ী। এদের রিমেকের কোনও প্রয়োজন নেই। আমরা আপনার চরণ ছুঁয়ে যাচ্ছি। বাংলা সিনেমাকে মহা বিপদের হাত থেকে বাঁচান।
(নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। নন্দ ঘোষ রোজ একেকজনকে আক্রমণ করেন। তার মুখে কিছুই আটকায় না। সে বরাবরই ঠোটকাটা। পড়ুন, এটাকে মজা হিসেবেই দেখুন। )