ইন্টারভিউ নিতে ডাকলেন সুচিত্রা সেন!‌

স্বয়ং সুচিত্রা সেন ফোন করে ইন্টারভিউ দিতে চাইলেন! কিন্তু ছবি তুলতে বাধা দিলেন কেন? লিখেছেন স্বরূপ গোস্বামী।।

হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইলটা। অচেনা নম্বর। সাতসকালে কে আবার ফোন করে জ্বালাত করছে! অচেনা নম্বর দেখলে ফোন ধরার ব্যাপারে একটা দ্বিধা থেকেই যায়। ফোন না ধরার একটা ‘সুনাম’ ইতিমধ্যেই আমি অর্জন করেছি। যথারীতি এই ফোনটাও বেজে গেল, বেজেই গেল। থাক, সাত সকালে কে ফোন করে মাথা খাবে। যদি খুব দরকার হয়, সে আবার করবে। এই ভাবতে না ভাবতেই আবার বেজে উঠল। না, এবার ধরা যাক।
ধরলাম। ওপার থেকে এক মহিলা কণ্ঠস্বর। কিছুটা যেন চেনা। তবে একটা বয়সের ছাপ। কে হতে পারে? আমার নাম জানতে চাইলেন। বললাম। তারপর বললেন, আপনি আমার ইন্টারভিউ নিতে চেয়েছিলেন ?
সাত সকালে এ তো আচ্ছা ঝামেলা! কার সঙ্গে কথা বলছি, সেটাই জানি না। কী করে বলব, তার ইন্টারভিউ নিতে চাই কিনা।
কিন্তু এভাবে তো বলা যায় না। তাই আমতা আমতা করে বললাম, না, ম্যাডাম, আপনি কে, জানলে সুবিধা হত।
ওপার থেকে আওয়াজ এল – আমি সুচিত্রা সেন।

সু—চি—ত্রা—সে– ন ! আমি তখন কী বলব, খুঁজে পাচ্ছি না। ভাষা হারিয়ে ফেলছি।

না, মানে হ্যাঁ, মানে আপনি, আপনি ভাল আছেন ?
আপনি চিঠি লিখেছিলেন। ইন্টারভিউ নেওয়ার কথা লিখেছিলেন। আপনার চিঠি আমার ভাল লেগেছে। তাছাড়া, এভাবে কেউ কখনও অ্যাপ্রোচ করেনি। আপনি আসতে পারেন। তবে পনেরো মিনিট। তার বেশি নয়।

আমিঃ হ্যাঁ, কিন্তু কবে, মানে কখন যাব ?
সুচিত্রাঃ আজ। ঠিক বারোটা পনেরোয়। বাড়ি চেনেন ?

আমিঃ না, মানে হ্যাঁ ।

সুচিত্রাঃ যে কোনও একটা কথা বলুন। হয় বলুন না, নইলে বলুন হ্যাঁ।

আমিঃ কিছু মনে করবেন না। এই প্রথমবার আপনার সঙ্গে কথা বলছি তো! আমি কিছুটা নার্ভাস। আগে আপনার বাড়ি দেখেছি। যদি চিনতে নাও পারি, ঠিক খুঁজে নেব।
সুচিত্রাঃ তাহলে, রাখছি। ঠিক বারোটা পনেরো।

বলেই ফোন রেখে দিলেন। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। ঠিক শুনছি তো! যে সুচিত্রার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য দেশের সেরা চ্যানেলগুলি মুখিয়ে আছে, সেই সুচিত্রা সেন কিনা নিজে থেকে ফোন করে ইন্টারভিউ দেবেন! কেউ ইয়ার্কি মারছে না তো ?

suchitra5

না, তাও তো হওয়ার কথা নয়। আমি যে সুচিত্রা সেনের ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলাম, এটা তো ঘটনা। কাউকে তো চিঠির কথা বলিওনি। হতেই পারে, সেই চিঠি উনি পড়েছেন। এই নেটের যুগে কেউ তো চিঠি লেখে না। তাই হয়ত আমার চিঠিটা তাঁর খুব আন্তরিক মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, ছেলেটা এত করে যখন লিখেছে, তখন ইন্টারভিউ দেওয়াই যায়।

মাত্র পনেরো মিনিট। আমার বিস্ময় কাটতেই তো দশ মিনিট লেগে যাবে। কী প্রশ্ন করব ? যদি রেগে যান! তাঁর যা মুডের কথা শুনেছি, হুট করে হয়ত বলে বসবেন, অনেক হয়েছে, এবার এসো। ছবি তুলতে দেবেন তো ? যদি ক্যামেরা দেখলেই রেগে যান ! এখনকার চেহারাটা দেখাতে চাইবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। আবার ছবি না থাকলে তো কেউ বিশ্বাসও করবে না। ভাববে গুল মারছি।
ঝটপট তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এগারোটার আগেই বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে পৌঁছে গেলাম। সোয়া বারোটা মানে সোয়া বারোটা। এক মিনিটও দেরি করা যাবে না।
বাড়ির গেটের সামনে চারজন দারোয়ান। গুটি গুটি পায়ে গেলাম। বললাম, ম্যাডামের সঙ্গে একটু দেখা করব।
আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত মাপলেন। বললেন, কে আপনি ? ম্যাডাম কারও সঙ্গে দেখা করেন না, এটা জানেন না ?

বললাম, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। উনি নিজেই ডেকেছেন।

উনি ডেকেছেন ? গুল মারার জায়গা পাননি ?

জিজ্ঞেস করে দেখুন। উনি সত্যিই আমাকে ফোন করেছিলেন। সোয়া বারোটায় আসতে বলেছিলেন।
এসব কথাবার্তা চলছে। তখন একজন ভেতরে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে। আপনি বারোটা দশ নাগাদ উপরে যাবেন।
আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। কী বলব, কী প্রশ্ন করব, সব গুলিয়ে যাচ্ছিল।
বারোটা দশ। একজন সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন ওপরের সেই ঘরের কাছে। তিনিই ডোরবেল বাজালেন। দরজা খুললেন স্বয়ং সুচিত্রা সেন।

মুখের দিকে ভাল করে তাকানোর আগেই ঝপ করে প্রণাম করে বসলাম। সামনে সুচিত্রা। বহু তাবড় তাবড় লোকেরা তাঁর দেখা পায়নি। আমি কিনা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ! তখন আর পেশাগত কাঠিণ্য কে রাখতে চায়!
বললেন, থাক থাক, ভেতরে এসো।
একটা সোফায় বসতে দিলেন। তারপর ভেতরে ঢুকে গেলেন। নিজেই একটা প্লেটে করে বেশ কিছু মিষ্টি সাজিয়ে নিয়ে এলেন।
আমি ইতস্তত করছি। থাক, এসবের কী দরকার ছিল ?

সুচিত্রাঃ নিশ্চয় খেয়ে আসোনি।
আমিঃ না, মানে হ্যাঁ।
সুচিত্রাঃ আবার সেই না মানে হ্যাঁ ! তুমি কি কোনও কথাই পরিষ্কার করে বলতে পারো না ?
আমিঃ সামনে সুচিত্রা সেন থাকলে সবার সব কথা গুলিয়ে যায়। শুনেছি নাকি উত্তম কুমারও মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলতেন।
সুচিত্রাঃ তাই বুঝি !
এদিকে আমার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। পনেরো মিনিটের মধ্যে তিন মিনিট কেটে গেছে। এখন এসব খেজুরে গপ্প থাক।
সুচিত্রা বললেন, আগে খেয়ে নাও।
আমিঃ আপনি খাবেন না ?
সুচিত্রাঃ আমি এসব খাই না। কিন্তু আমার বাড়িতে এলে কেউ না খেয়ে যায় না।

হাতে একটা মিষ্টি তুলে নিলাম। বুঝলাম, এবার কথা শুরু করতে হবে।

আমিঃ আপনি নিজেকে গুটিয়ে নিলেন কেন ? বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করে না ?
সুচিত্রাঃ আর ধৈর্য রাখতে পারলে না ? একেবারেই শুরুতেই এই প্রশ্ন !

আমিঃ না, এটাই তো লোকে সবার আগে জানতে চায়।
সুচিত্রাঃ লোকের এত কৌতূহল কেন ?
আমিঃ সুচিত্রা সেনকে ঘিরে কৌতূহল হবে না তো কাকে ঘিরে হবে ? আপনি যদি মেগা সিরিয়ালে ঠাকুমার রোল করতেন, এখানে ওখানে ফিতে কাটতে যেতেন, সুশীল সমাজের সঙ্গে মোমবাতি মিছিলে হাঁটতেন,বা সরকারের বঙ্গবিভূষণ নিতে যেতেন, তাহলে এত কৌতূহল থাকত না।
সুচিত্রাঃ তাই ! তাহলে দূরে থেকে ঠিকই করেছি।
আমিঃ এভাবে গুটিয়ে থাকতে কষ্ট হয় না? চেনা মানুষগুলোকে দেখতে ইচ্ছে করে না ?
সুচিত্রাঃ দেখি তো। টিভি খুললেই তো সবাইকে দেখা যায়। কে কী করছে, কে কী বলছে, সবই দেখতে পাই। এত দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি। তাই আর টিভি দেখতেও ইচ্ছে করে না।
আমিঃ তার মানে আপনি সিরিয়াল দেখেন না ?
সুচিত্রাঃ তোমরা দেখ নাকি ? কী খোরাপ পাও সেখান থেকে ? যত্তসব রাবিশ। গয়না পরে, বেনারসি পরে রান্না করছে। ঘরে ঘরে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছে। টেনে হিঁচড়ে মাসের পর মাস চালিয়ে যাচ্ছে। কারা দেখে, কেন দেখে, বুঝি না।

আমিঃ কিন্তু আপনার সময়ের অনেক অভিনেতা- অভিনেত্রী তো এইভাবেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
সুচিত্রাঃ সিরিয়াল না করলে বুঝি অস্তিত্ব থাকে না? উত্তম কুমারকে কি লোকে ভুলে গেছে ?
আমিঃ সবাই তো আর উত্তম কুমার নয় !
সুচিত্রাঃ শুধু উত্তম কুমার কেন, কার নাম বলব ? ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, কমল মিত্র, ছায়া দেবী, ভানু ব্যানার্জি, রবি ঘোষ, এদের লোকে ভুলে গেছে ? যারা এখনও বেঁচে আছে, তাদের মধ্যেও এমন অনেক নাম করা যায় । আসল কথা হল, কে কেমন কাজ করছে। ঠিকঠাক কাজ করলে এত সহজে লোকে ভুলে যাবে না।

আমিঃ কিন্তু আপনার সঙ্গে যাঁর নাম উচ্চারিত হত, সেই সুপ্রিয়া দেবী তো ডাটা গুড়ো মশলার বিজ্ঞাপন থেকে বেনুদির রান্নাঘর, সিরিয়াল থেকে যাত্রা, রিয়েলিটি শো থেকে রাজনৈতিক মিটিং। সব করেছেন।
সুচিত্রাঃ বেনুকে এভাবে ছোট করা ঠিক নয়। ও অনেক বড় অভিনেত্রী। ওর ছবিগুলো দেখেছো ? মেঘে ঢাকা তারা বা কোমল গান্ধার দেখেছো ? দেখলে এই কথা বলতে না। একেকজন একেকভাবে বাঁচে। সবাইকে আমার মতো হতে হবে, এমন কোনও দিব্যি দেওয়া আছে নাকি ? ও ওর মতো। তবে সবকিছুতে জড়িয়ে না পড়লেই ভাল করত। নিজের ওজন নিজেকে বুঝতে হয়। ওর এমন কিছু টাকার অভাব পড়েনিযার জন্য ওকে এসব করতে হবে। যদি কথা হয়, ওকে একবার বকে দেব। বলব, নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে।
আমিঃ আপনি এখন থাকলে আপনাকে হয়ত জিৎ বা দেবের ঠাকুমা হতে হত।
সুচিত্রাঃ কে বলল ? হ্যাঁ, ওরা হয়ত আমার নাতির পার্ট করত। তার মানে কিন্তু আমি ওদের ঠাকুমা নই।
আমিঃ ব্যাপারটা তো একই রকম।
সুচিত্রাঃ দুটো ব্যাপারকে তোমার একইরকম মনে হল ? এই বুদ্ধি নিয়ে তোমরা লেখালেখি করো ?

অন্য কেউ হলে পাল্টা দু-চার কথা শুনিয়ে দিতাম। কিন্তু সুচিত্রা সেন বলে কথা। তাঁর সঙ্গে কি তর্ক করা উচিত ? নিজেকে বললাম, যা বলছেন, হজম করে যাও। রাগ হলেও দাঁত কেলিয়ে হেসে যাও।

আমিঃ এখনকার ছবি দেখেন ?
সুচিত্রাঃ একেবারে দেখি না বললে ভুল হবে। তবে দেখতে ইচ্ছে করে না। মুনমুনের অনেক ছবিই দেখেছি। রাইমার ছবিও দেখেছি। এখন তো ছবি দেখার জন্য হলে যাওয়ার দরকার পড়ে না। ঘরে বসেই দিব্যি দেখা যায়।

suchitra6

আমিঃ এখন তো অনেক নতুন নতুন পরিচালক আসছেন। বেশ ভাল কাজ করছেন। বাংলা ছবিতে নতুন নতুন ভাবনা আসছে।
সুচিত্রাঃ ও সব ব্যাপার নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। যার নাম করব, সে স্ক্রিপ্ট নিয়ে হাজির হয়ে যাবে। যার নাম করব না, তার রাগ হয়ে যাবে। তবে ঋতুপর্ণ যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে, ভাবিনি। শুনেছি, ও নাকি অনেকবার আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। কী জানি, আমাকেও হয়ত তুই-তোকারি করে বসত (বলেই মুচকি হাসলেন)।

আমিঃ সত্যিই কি আর ছবিতে নামতে ইচ্ছে করে না ?
সুচিত্রাঃ ইচ্ছে হলে কি পরিচালক জুটত না ? সুচিত্রা সেনের বাজার নিশ্চয় এতটা পড়ে যায়নি। আমার বয়স কত, জানো তো ? লোকে ভাবে, আমার বয়স বোধ হয় সেখানেই থেমে আছে। বোঝাতে পারি না, এই পঁয়ত্রিশ বছরে আমার বয়সটাও আরও পঁয়ত্রিশ বছর বেড়েছে।
আমিঃ চৌত্রিশ বছর পর তো রাজ্যে পরিবর্তন ঘটল। আপনার ভাবনাতে পরিবর্তন আসতে পারে না ?

সুচিত্রাঃ রাজনীতির সঙ্গে আমাকে গুলিয়ে ফেললে ! আমি নিজেকে এতদূরে রাখার পরেও যদি জড়িয়ে ফেলো, তাহলে তো মহা মুশকিল। আমি তো এসব কিছুতে নেই। তাছাড়া, এখন এই বয়সে লোক হাসিয়ে কোনও লাভ আছে ?
আমিঃ শোনা যায়, গুলজার নাকি একবার আপনাকে নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলেন। স্বেচ্ছা নির্বাসন ভেঙে আপনিও নাকি ফিরে আসতে রাজি হয়েছিলেন।
সুচিত্রাঃ আমাকে নিয়ে ছবি করতে তো অনেকেই চায়। হ্যাঁ, উনি আমার ভাল বন্ধু। যোগাযোগ আছে। নানা রকম কথা হয়। তার মানে এই নয় যে আবার অভিনয়ে নামতে হবে। একটা গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। কাগজে খবরও বেরিয়েছিল। কিন্তু তা যে সত্যি নয়, তা তো এতদিনে সবাই জেনেই গেছে। উনি একবার বলেছিলেন, সত্যিই কি ছবি করবেন না ? আমি মজা করে বলেছিলাম, আপনি বললেই করব। উনি বুঝেছিলেন, ওটা আমার রসিকতাই ছিল। এটা বোঝেন বলেই আর দশজনের থেকে উনি আলাদা।
আমিঃ আপনি নাকি সত্যজিৎ রায়কেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন !
সুচিত্রাঃ তোমার পনেরো মিনিট কিন্তু আগেই ফুরিয়ে গেছে। তুমি আবার পুরনো কথা টেনে আনছো কেন ? একটু পড়াশোনা কর। এসব কথা সবাই জানে। উনি একজন বরেণ্য পরিচালক। তাঁর সম্পর্কে এভাবে বলা ঠিক নয়।

আমিঃ উত্তম কুমারকে মিস করেন ?
সুচিত্রাঃ সবাই করে।
আমিঃ উত্তম নেই বলেই কি নিঃশব্দে সরে গেলেন ?

সুচিত্রাঃ উত্তম কবে মারা গেছে ? আমি কবে ওর সঙ্গে শেষ ছবি করেছি ? এগুলো আগে জানো। আমার প্রণয়পাশা দেখেছো ?
আমিঃ না, দেখা হয়নি। ওটাই নাকি আপনার শেষ ছবি ?
সুচিত্রাঃ আবার নাকি! তোমরা কি কিছুই পড়াশোনা কর না ? ইন্টারভিউ করতে চলে এসেছো ? ওই ছবিটা দেখলে বুঝতে। আমার মনে হয়েছিল, নিজের সেরাটা দিতে পারিনি। এবার সরে যাওয়াই ভাল। তারপর থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। উত্তম মারা গেছে তারও দু বছর পরে।
আমিঃ পারফর্মারের জীবনে চড়াই উতরাই তো আসেই। তাই বলে কি সরে যেতে হবে ? ঘুরে দাঁড়ানোও তো একটা চ্যালেঞ্জ।
সুচিত্রাঃ শুধু এটাই চ্যালেঞ্জ? মাথা উঁচু রেখে সরে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জ নয় ?
আমিঃ আর কি কোনওদিন বাইরে বেরোবেন না ?
সুচিত্রাঃ আগে নানা জায়গায় ইচ্ছেমতো গেছি। কখনও ভোর বেলায় বেলুড় মঠে গেছি। কখনও কাছের মানুষদের বাড়িতেও গেছি। কেউ টের পায়নি। হাসপাতালে যেতে হল। সেখানেও মিডিয়ার ভিড় লেগে গেল। তাই আর হাসপাতাল যেতেও ইচ্ছে করে না। ওখানে কি মেলা হয় নাকি ? এত ভিড় করার কী আছে ?

suchitra4

হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকালেন। বললেন, তোমার পনেরো মিনিট অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে। অনেক কথা হয়েছে। এখানেই থাক।

আমিঃ ম্যাডাম, এখনও যে অনেক প্রশ্ন ছিল।
সুচিত্রাঃ কথা ছিল পনেরো মিনিট। সেটা হয়ে গেছে। প্লিজ, এবার স্টপ করো।
আমিঃ একটা ছবি তুলব ?
সুচিত্রাঃ না । আমার এই ছবি বেরোক, তা আমি চাই না।
আমিঃ নইলে কেউ বিশ্বাস করবে না আপনি ইন্টারভিউ দিয়েছেন।
সুচিত্রাঃ তোমার কথায় যদি লোকে বিশ্বাস না করে, তার জন্য নিশ্চয় আমি দায়ী নই। সেটা তোমার সমস্যা।

ক্যামেরা বের করলাম। হাতের সামনে সুচিত্রা। ছবি না তুললে কেউ বিশ্বাস করবে ? ক্লিক করতে গেলাম। উনি চিৎকার করে বললেন, ‘প্লিজ স্টপ। আই সে, স্টপ প্লিজ।’ বলেই ভেতরের ঘরে ঢুকে গেলেন।

আমি কী করব ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। পরে মনে হল, এবার চলে যাওয়াই ভাল। সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলাম। এমন একটা ইন্টারভিউ। কেউ বিশ্বাসও করবে না।

এতক্ষণ যাঁরা কষ্ট করে পড়ছেন, নিশ্চয় তাঁদেরও বিশ্বাস হচ্ছে না। না হওয়ারই কথা। ভাবছেন, বানিয়ে বানিয়ে লিখছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, বছর দেড়েক আগে আমি সত্যিই এমন একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম।

(‌লেখাটি আগেও বেঙ্গল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। সুচিত্রার মৃত্যুবার্ষিকীতে ফের প্রকাশিত হল।।)‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.