পুজোয় বাঙালির কি দার্জিলিং বয়কট করা উচিত?‌

(‌বিতর্কের বিষয় ছিল, পুজোয় বাঙালির কি দার্জিলিং বয়কট করা উচিত?‌ বেশ কয়েকটি চিঠি এসেছে। আপাতত পক্ষে ও বিপক্ষে একটি করে চিঠি প্রকাশ করা হল। আরও কিছু চিঠি আগামী কয়েকদিনে প্রকাশ করা হবে। আপনারাও মতামত জানাতে পারেন।)‌

হ্যাঁ, কড়া বার্তাই দেওয়া উচিত

রাজেশ পট্টনায়েক

অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি বিতর্ক। আমার মনে হয়, বাঙালিদের সেটাই করা উচিত। বাঙালি যেমন পাহাড়কে ভালবাসে, তেমনি পাহাড়ের মানুষেরও মনে রাখা উচিত, তাঁদের অর্থনীতি অনেকটাই দাঁড়িয়ে আছে বাঙালিদের জন্য। পর্যটকই যদি না যায়, তাহলে সেই পর্যটন কেন্দ্রের গরিমা ক্ষুন্ন হতে বাধ্য। দিনের পর দিন কাশ্মীরকে অগ্নিগর্ভ করে রেখেছিলেন উগ্রপন্থীরা। এতে ক্ষতিটা কার হয়েছে?‌ কাশ্মীরের মানুষেরই হয়েছে। এই সহজ ব্যাপারটা মোর্চা নেতারাও বোঝেন না। আর পাহাড়ের মানুষও হয়ত বুঝতে চাইছেন না। তাঁরাও নেমে পড়েছেন হিংসাত্মক আন্দোলনে। মনে পড়ে যাচ্ছে, সত্যজিৎ রায়ের লেখা সেই গানটা, ‘‌তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল।’‌ পাহাড়বাসীর উদ্দেশ্যেও বলতে ইচ্ছে করছে, তোরা রাজ্য নিয়ে করবি কী তা বল। বিমল গুরুংরা আরও লুটপাট করবে, তাদের উদ্দেশ্য না হয় বোঝা যায়। কিন্তু পাহাড়বাসীর কি সত্যিই উন্নতি হবে?‌ এই সহজ ব্যাপারটা পাহাড়ের মানুষ কেন বুঝছেন না?‌
তাই আমার মনে হয়, বাঙালি টুরিস্টদেরও এবার একটা বার্তা দেওয়া উচিত। দার্জিলিং ছাড়াও দেশে অনেক পাহাড় আছে। এমনকী পাশের রাজ্য সিকিম আছে। দার্জিলিং না গেলেও বাঙালি পাহাড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে না। কিন্তু বাঙালি না গেলে পাহাড়ের মানুষ অনেককিছু থেকেই বঞ্চিত হবেন। সেখানকার হোটেল চলবে না, রেস্টুরেন্ট চলবে না, যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁদের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে। যাঁরা পোশাক বিক্রি করেন, তাঁদের পোশাক বিক্রি হবে না। না, এঁদের ক্ষতি হোক, এটা কখনই চাই না। কিন্তু অতীত থেকে তাঁরা শিক্ষা নিতে পারেননি। পাহাড়ে শান্তি ফিরেছিল, পর্যটকের ঢল নেমেছিল। এতে কার লাভ হচ্ছিল?‌ তাহলে, শান্ত পাহাড়কে অহেতুক অশান্ত করতে গেলেন কেন?‌ পর্যটক কেন সেখানে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে চাইবেন?‌ তাই আমার মনে হয়, অন্তত একটা বছর বাঙালি পর্যটকরা দার্জিলিং বয়কট করুন। পাহাড়বাসীরা অন্তত বুঝুন, মোর্চার হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনে তাঁদের কোনও লাভ হবে না।
************************

darjeeling

মনে মনে বলুন, হ্যাঁ, পুজোয় দার্জিলিংই যাব

অভয় পাত্র

এই বিষয়ের সঙ্গে একমত হতে পারছি না। বিমল গুরুংদের ওপর আপনার রাগ থাকতেই পারে। তাই বলে পাহাড়ের মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে, এটা কোনও যুক্তি নয়। পাহাড়ে যা হচ্ছে, এর পেছনে সাধারণ মানুষের আবেগ কতখানি আছে, সন্দেহ আছে। একসময় সুবাস ঘিসিং একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করে এসেছেন। এখন বিমল গুরুংকেও যেভাবেই হোক, পাহাড়ের মসনদ ধরে রাখতে হবে। জিটিএ নির্বাচন আসছে। তাই ফের নতুন রাজ্যের জিগির তুলে হাওয়া গরম করতে চাইছেন। এর সঙ্গে দার্জিলিংয়ের সাধারণ মানুষের আবেগ কি আদৌ জড়িয়ে আছে?‌
পাহাড়ে যে বনধ হচ্ছে, সেটা গুরুংদের ভয়ে। দোকান বন্ধ না রাখলে মোর্চা হামলা চালাতে পারে, তাই তাঁরা বন্ধ রাখছেন। ক্রমাগত বনধ হলে কতখানি ক্ষতি হয়, পাহাড়ের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই তা জানেন। তাঁরা চাইবেন না পাহাড় ফের অশান্ত হোক। তবু যা ঘটছে, সেটা কয়েকজনের গুন্ডামি। এর জন্য পাহাড় বয়কটের কোনও মানে হয় না।
বাঙালি পাহাড় যাবে না কেন?‌ দার্জিলিংকে আমরা কি গুরুংদের থেকে কম ভালবাসী?‌ এত জায়গা থাকতে বারবার আমরা দার্জিলিং ছুটে যাই কেন?‌ ভাল না বাসলে এত লাখ লাখ বাঙালি যেত?‌ শুধুমাত্র বিমল গুরুংদের ওপর রাগ করে পাহাড় যাওয়া বন্ধ করব কেন?‌ আজ উত্তপ্ত আছে, কাল হয়ত থেমে যাবে। কারণ, এই লড়াই তারা চালিয়ে যেতে পারবে না। আলাদা রাজ্য পাওয়া যে সম্ভব নয়, এটা গুরুংরা সবথেকে ভাল বোঝে। তাই আবার কোনও এক চুক্তি হবে। আবার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে। মনে রাখবেন, এই চরম আন্দোলনে পর্যটকদের ভোগান্তি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পাহাড়ের মানুষ পর্যটকদের গায়ে হাত দেয়নি। পর্যটকদের আগলে রেখেছেন। কোনও পর্যটক কিন্তু আক্রান্ত হননি। এটাও কিন্তু মনে রাখতে হবে। তাই ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে আমার আবেদন, আপনারা পাহাড় বয়কটের কথা ভাববেন না। বিশ্বাস রাখুন, পাহাড় আবার শান্ত হবে। অহেতুক ভয় পাবেন না। আতঙ্ক ছড়াবেন না। মনে মনে বলুন, হ্যাঁ, পুজোয় দার্জিলিংই যাব।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.