এই চিরঞ্জিৎকে আপনি চিনতেন?‌

এই চিরঞ্জিৎকে কি আপনি চিনতেন?‌ হ্যাঁ, তিনি এক সময় দূরদর্শনে খবর পড়তেন। সেই সাবেকি দূরদর্শন যাঁরা দেখতেন, তাঁদের হয়ত মনে আছে। সেই স্মৃতির সরণি বেয়ে হাঁটলেন চিরঞ্জিৎ।

কার জীবনে কখন যে কী বাঁক আসে, কে বলতে পারে! চিরঞ্জিৎকে দেখলে সেটা আরও ভাল করে বোঝা যায়। কখনও তিনি জনপ্রিয় অভিনেতা। কখনও অভিনয় থেকে ছুটি নিয়ে মন দিয়েছিলেন নিজের গবেষণায়। তারপর হযে গেলেন বিধায়ক। শুধু একবার নয়, দ্বিতীয়বারও অনায়াসে জিতে এলেন বারাসত থেকে। কিন্তু তারও আগে ছিল অন্য এক পরিচিতি। কজন জানেন, চিরঞ্জিৎ ছিলেন দূরদর্শনের একজন সংবাদপাঠক ?

chiranjit

যাঁরা সাতের দশক বা আটের দশকের গোড়ায় দূরদর্শনের দর্শক, তাঁদের হয়ত মনে আছে দীপক চক্রবর্তীকে । সেই সুদর্শন যুবক, ভরাট কণ্ঠস্বর। গ্রাম বাংলায তখনও সেভাবে পা রাখেনি টেলিভিশন। মূলত শহরাঞ্চলের মানুষেরাই দেখতেন। তাঁদের নস্টালজিয়ায় হয়ত ধরা পড়তে পারে সেইদিনগুলির কথা। কিন্তু চিরঞ্জিতের কি মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা।

সারাদিনই ব্যস্ত ছিলেন ডাবিংয়ের কাজে। তার মাঝেই বারবার বিরক্ত করা। শেষমেষ পুরানো সেই পরিচয়ে পাওয়া গেল দীপক চক্রবর্তীকে। জানা গেল, কোনও পরিকল্পনা করে নয, কিছুটা হঠাৎ করেই এসে পড়েছিলেন খবর পড়ার দুনিয়ায়। তাঁর মুখেই শোনা যাক, ‘তখন দূরদর্শনের খুব জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল হরেকরকম্বা ও চিচিং ফাঁক। দুটোই মূলত বাচ্চাদের অনুষ্ঠান। আমার বাবা শৈল চক্রবর্তী এই দুই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে টুকটাক কিছু সাহায্য করতাম। সেই সুবাদে আমিও জড়িয়ে গেলাম। এই ভাবেই যাওয়া আসা। যূথিকা দত্তর আমাকে খুব পছন্দ হয়ে গেল। তিনিই মূলত আমাকে সংবাদ পাঠক করে তুললেন। বিরাট কোনও প্রস্তুতিও ছিল না। প্রায় হঠাৎ করেই হয়ে গেলাম সংবাদ পাঠক।’

dd bangla2

ভালো-মন্দ মিলিয়ে নানা অনুভূতি। তখন রেকর্ডিং হত রাধাকৃষ্ণ স্টুডিওতে। নির্ধারিত সমযের অনেক আগেই পৌঁছে যেতে হত স্টুডিওতে। পৌঁছতে গিয়েও কত সমস্যা। কোনওদিন জল কাদা মাড়িয়ে, ভিজে ভিজেও পৌঁছতে হয়েছে। আবার কোনওদিন গিয়ে খুব গইহুল্লোড়ও হয়েছে। কোনওদিন খুশির খবর। আবার কখনও পড়তে হচ্ছে কারও মৃত্যু সংবাদ। কীভাবে গলার ওঠা-নামা আয়ত্ব করেছিলেন ? হাসতে হাসতেই সেদিনের দীপক চক্রবর্তী বললেন, আমি এত নাটক করতে পারতাম না। আমাদের মধ্যে তরুণ চক্রবর্তী খুব নাটকীয় ভঙ্গিমায় খবর পড়ত। শেষ পর্যন্ত ও হিরো না হয়ে ফিল্মে আমিই কিনা হিরো হয়ে গেলাম।’

প্রায় বছর সাতেক এই ভূমিকায় ছিলেন। একদিকে চলছে নাগপাশ নাটকের কাজ। অন্যদিকে চলছে প্রতিকার ছবির শুটিং। একসঙ্গে এত দিক সামলে ওঠা মুশকিলই ছিল। তাই বাধ্য হয়েই সংবাদপাঠ-কে গুডবাই জানাতে হয়। কিন্তু পুরানো দিনগুলো মাঝে মাঝেই ভেসে ওঠে, ‘তখন তো কম্পোজ করা কপি পেতাম না। হাতে লেখা কপি দেখে পড়তে হত। যেমনি হাতের লেখা, তেমনি বানান ভুল। চারজন অনুবাদক ছিলেন। একেক জনের একেক রকম লেখা। পড়তে বেশ সমস্যাই হত। পরে অবশ্য কিছুটা ধাতস্থ হয়ে যাই। তবে স্টুডিওতে ঢোকার আগেই কিছু কিছু কপি হাতে পেয়ে যেতাম। ফলে, একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারতাম।’

এখন নানা বেসরকারি চ্যানেলে সারাদিন ধরে খবর। অথচ, তখন বাঙালি অপেক্ষা করে থাকত কখন সন্ধে হবে। তাঁর মুখ থেকেই বাঙালি জানতে পারত সারাদিনের নানা খবর। সে এক অন্য অনুভূতি। এখনও সময় পেলে টিভিতে চোখ রাখেন। বেসরকারি নিউজ চ্যানেলের পাশাপাশি সার্ফিং করতে করতে এসে যায় সেই সাবেকি দূরদর্শন। দীপক চক্রবর্তী হয়ত ফিরে যান চার দশক আগে ফেলে আসা সেই দিনগুলিতে।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.