বৈশাখ আর জ্যৈষ্ঠ। বাংলা বছরের প্রথম দুটো মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার দুই শ্রেষ্ঠ সন্তানের নাম। বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ। জ্যৈষ্ঠে নজরুল। বঙ্গজীবনের সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এঁরা, জড়িয়ে আছেন খেলার ময়দানের সঙ্গেও।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মোহনবাগানের সম্পর্ক নিয়ে এর আগে bengaltimes.in-এ প্রকাশিত হয়েছিল একটি লেখা। নজরুলের মোহনবাগানপ্রেম নিয়ে এমনই একটি লেখা খুঁজে পাওয়া গেল, somewhereinblog.net-এর পাতায়। তারই নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করা হল।
ক্যালান্ডারের পাতায় তখন ১৯২৭ সাল।
বাঙালি খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত মোহনবাগান ক্লাবের সাথে আজ আর ডি সি এল আই দলের খেলা। এ দলটি বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে গড়া। কাজেই খেলা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা। হাসির আওয়াজে আসমান ফাটানো কাজি নজরুল এ খেলা দেখতে যাবেন না, তা কি করে হয়? কবির বন্ধুরা তাই সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে টিকেট খুঁজে হয়রান, কিন্তু কোথাও মিলল না। সবাই যখন একটু মন ভার করে কবির অফিসে এসে হাজির, কবি তাদেরকে দেখালেন, এ খেলার জন্য তিনি আগেই সবার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সবাই আনন্দে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য তৈরি হল। এ সময় তিনি প্রায় প্রতিদিন কাজ শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেলার মাঠে যেতেন। ক্রীড়ামোদী হিসেবে তখন তার বেশ পরিচিতিও ছিল বন্ধুমহলে।
জীবনের শুরু ও শেষে নিদারুণ অর্থকষ্টে কাটানো কবি নজরুল এ সময়টাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন। কাজ করতেন সওগাত পত্রিকার অফিসে। বেতন হিসেবে পেতেন কমপক্ষে তৎকালে দু শ টাকা। কবিতা গান গল্প আর রচনা লিখে আরও বেশ কিছু কামাই হত তাঁর। এমন সুদিনে তিনি বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকতেন হৈ হুল্লোড়ে। তার খামখেয়ালীপনার কান্ড কারখানা দেখে আনন্দের বন্যায় ভেসে যেত বন্ধুদের সব দুঃখ বেদনা।
খেলা শুরু হল। কবির দু পাশে তার বন্ধুরা তাকে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছেন প্রহরী হিসেবে। খেলা দেখার সময় সব ভুলে একেবারে অন্যমানুষ যেন ছোট শিশুর মত হয়ে যেতেন নজরুল। কখনও আনন্দে লাফ দিয়ে কারও গায়ে পড়ে যেতেন, নয়তো কাউকে বল ভেবে পদাঘাত করে বসতেন, গোল গোল বলে জ্ঞানশূন্য হয়ে কাঁিপয়ে তুলতেন চারদিক তুমুল চিৎকারে। মাঠভর্তি দর্শক হা করে তাকিয়ে দেখত বিদ্রোহী কবির শিশুসুলভ কান্ডকারবার। বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হতো আশেপাশের মানুষ।
খেলা শেষ হল। ছয় গোলে মোহনবাগান হারিয়েছে বিদেশি ফুটবলারদের। নজরুলের আনন্দ তখন আর দেখে কে?
শুরু হল বন্ধুদের নিয়ে তার উল্লাস নৃত্য। সবাইকে নিয়ে নেচে খেলে ক্লান্ত হলেন কবি। তারপর ঢুকলেন পাশের খাবারের দোকানে। পেট ভরে সবাই তৃপ্ত হল। তবু মন ভরে না দুরন্ত কবির। এই চল, চন্দননগন থেকে ঘুরে আসি। প্রাণখোলা নজরুলের মুখে এমন কথায় সবাই একলাফে রাজি। কারও বাড়িতে কেউ জানাল না, সবাই চলল চন্দননগর।