বালক সত্যজিৎ রায়কে একটি কবিতা লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিখ্যাত সেই কবিতাটির শেষ লাইন হল, “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শিষের উপরে/ একটি শিশির বিন্দু।’
এই কবিতাটি সব থেকে বেশি সত্যি রবীন্দ্রনাথের নিজের বাড়ি সম্বন্ধে। আমরা তাজমহল দেখেছি, মথুরা-বৃন্দাবন দেখেছি, সুদূর লাদাখে গিয়ে গুম্ফা দেখেছি, কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে হ্যানা প্যালেস, ত্যানা ম্যানসন দেখে এসেছি। কিন্তু বুকে হাত রেখে বলুন তো, কজন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি গেছি?
হ্যাঁ শান্তিনিকেতনে অনেকেই গেছি। কিন্তু সে তো প্রকৃতি দেখব বলে, বসন্ত উৎসবে নাচ দেখব বলে। রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, তার জন্মকক্ষ, প্রয়াণকক্ষ কজন দেখেছি? মহাআঁতেল রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে কিছু না জানুক, তার বৌদির কথা জানে। কিন্তু কারও মনে কি ইচ্ছা হয়েছে, সেই বৌদির ঘরটি দেখে আসি? যে ঘরের সামনে কিশোর রবীন্দ্রনাথ, আর তাঁর বউদি গল্প করতেন।
অথচ যাতায়াতে কোনও অসুবিধা নেই। বাসে বা মেট্রোতে চেপে এক ঘণ্টার মধ্যেই যাওয়া যায়। টিকিট কাটতে, হয় না, লাইন দিতে হয় না, পুলিশ বডি সার্চ করে না। ২৫ বৈশাখ, ২২ শ্রাবণ ভিড় হয়, অন্য দিনগুলো ফাঁকাই থাকে। যান না ঘুরে আসুন। কত জায়গায় তো সেলফি তোলেন, এবারের সেলফিটা না হয় রবি ঠাকুরের বাড়িতেই তুললেন। দেখবেন ফেসবুক হোয়াটস্যাপে বাড়তি লাইক পাবেন। আরও ভালো হয় যদি ফেরার পথে কলেজ স্ট্রিট থেকে সঞ্চয়িতা, গীতবিতান বা গল্পগুচ্ছ কেনেন। সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে কিছু আনকমন কোট ঝাড়ুন, দেখবেন, আপনাকে ঘিরে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, কমেন্ট, লাইকের বান ডেকে যাবে।
শুধু ঠাকুরবাড়ি কেন? সত্যজিতের বাড়ি, নেতাজির বাড়ি ঘুরে আসুন। সেই ঘোরার অভিজ্ঞতা আমাদের জানান। কথা দিচ্ছি, আপনার নাম দিয়ে প্রকাশ করব।