যাঁরা উল্লসিত, তাঁরা হতাশ হওয়ার জন্য তৈরি থাকুন

রক্তিম মিত্র

সিবিআই কি তবে নড়েচড়ে বসছে?‌ ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু এখনই এমন সিদ্ধান্তে আসার সময় হয়নি। এই এফআইআর করাটা একধরণের বাধ্যবাধকতা। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এক মাসের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তাই কিছু একটা করতেই হত সিবিআইকে। এই এফআইআর হল সেই ‘‌কিছু একটা করা’‌।

narad3সহজ কথা, সিবিআই সেটাই করবে, যেটা কেন্দ্রীয় সরকার চাইবে। রাজনৈতিক কারণে কখনও তারা জেগে ওঠার নির্দেশ দেয়, আবার কখনও ঘুমিয়ে থাকার পরামর্শ দেয়। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত থেকে এটা মোটামুটি পরিষ্কার। সিবিআইয়ের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বেশ বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন। সারদা কাড়্ডে তাদের অগ্রগতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। আম পাবলিকের কাছে যেটা জলের মতো পরিষ্কার, সেটা সিবিআই জানে না, এমনটা তো হতে পারে না। গত আড়াই বছর ধরে কত প্রমাণ যে লোপাট করা হয়েছে, তার হিসেব নেই। সিবিআই ও ইডি প্রতি পদে কীভাবে বাধার শিকার হয়েছে, এটা তাঁদের চেয়ে ভাল কে জানে!‌ যে দুই অফিসার প্রমাণ লোপাচ করার কাজে মূল অভিযুক্ত, তিন বছরেও তাঁদের ডাকার সময় হয়নি সিবিআইয়ের। এর পরেও এই তদন্তে আস্থা রাখার কোনও কারণ আছে?‌
তাই নারদ নিয়ে যাঁরা উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন, তাঁদের দ্রুতই মোহভঙ্গ হবে। কেউ কেউ ধরা পড়বেন। কয়েকদিন জেলে থাকবেন। কাগজে, চ্যানেলে কদিন হইহই হবে। ব্যাস, তারপর আবার সব থিথিয়ে যাবে। সিবিআই শুধু ‘‌প্রভাবশালী’‌ ‘‌প্রভাবশালী’‌ বলে কয়েকবার জামিন আটকাবে। তারপর একসময় জামিনও পেয়ে যাবেন। নারদা কান্ডে সরকার কী চায়, তা এক বছরেও সংসদে এথিক্স কমিটির মিটিং না হওয়া থেকেই পরিষ্কার। রাজ্যের সদিচ্ছা কতখানি, তা সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার ঘটনা থেকেই পরিষ্কার। রাজ্য–‌কেন্দ্র বোঝাপড়া কেমন হতে পারে, তা দুই তরফের অফিসার ছাড়া একান্ত বৈঠকেই পরিষ্কার। তাই যতই এফআইআর হোক, সিবিআই এখনও সেই ভরসা অর্জন করতে পারেনি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.