সরল বিশ্বাস
আচ্ছা বলুন তো, উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের সঙ্গে এই বাংলার কী সম্পর্ক? রাজ্য বিজেপি কিছুটি উৎফুল্ল হতেই পারে। দুটি রাজ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা। দুটি রাজ্যে পিছিয়ে থেকেও শেষমেষ সরকার গড়া ও আস্থা ভোটে জেতাও হয়ে গেল। অর্থাৎ, পাঞ্জাব বাদে বাকি চার রাজ্যে বেশ নিরাপদেই সরকার হয়ে গেল। বিজেপি শাসিত রাজ্যের সংখ্যা আরও বাড়ল। বাকি রাজ্যগুলো ছেড়ে দিন। একা উত্তর প্রদেশই যেন বাড়তি অক্সিজেন দিয়ে গেল দিলীপ ঘোষ অ্যান্ড কোংকে। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, এই রাজ্যে একজন দার্শনিক হয়ে গিয়েছেন।
হ্যাঁ, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েকদিন ধরে তিনি এমন সব বলে চলেছেন, যার সঙ্গে তাঁর আগের উক্তিগুলো মেলানো যাচ্ছে না। নিজে যেগুলো করেন, ঠিক তার উল্টো রাস্তায় হেঁটে জ্ঞান বিতরণ করছেন। তাঁর টুইট পড়লে মনে হবে যেন রামকৃষ্ণের কথামৃত পড়ছি। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি জেতার পরই বলে বসলেন, ‘নির্বাচনে একদল জেতে, একদল হারে। সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হয়।’ বাহ বাহ। কী চমৎকার কথা। শুনলে মন জুড়িয়ে যায়।
কৃষক দিবসের অনুষ্ঠানে হয়ত আরও তেড়েফুঁড়ে নামবেন ভাবা গিয়েছিল। সেখানেও তিনি কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে কী চমৎকার বার্তাই না দিয়ে গেলেন। ‘ রাজ্য আর কেন্দ্রকে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দুজন দুজনকে শ্রদ্ধা করবে। দুজন দুজনের কথা শুনবে।’ পরে বললেন বিরোধীদের মর্যাদা দিতে হয়, তাদের কথাও শুনতে হয়।
শুনতে সত্যিই বড় ভাল লাগে। ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কিনা বলছেন, বিরোধীদের গুরুত্ব দিতে হয়, মর্যাদা দিতে হয়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করতে হয়।’ ভেবে দেখুন, মণিপুরে তাঁর দলের নির্বাচিত বিধায়ক জেতার দুদিন পরেই ভিড়ে গেলেন বিজেপি শিবিরে। অন্য সময় হলে কী তুলকালামটাই না করতেন। এই সময় তিনি নিশ্চুপ। শুধু তিনি নন, দিল্লিতে তাঁর দলের সাংসদরাও কেমন যেন সুবোধ বালক হয়ে গিয়েছেন। হই হট্টগোল অনেকটাই কম। গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্না নামক দিবানাট্য আপাতত বন্ধ। অহেতুক বিরোধিতা নেই। কেমন একটা অদ্ভুত শান্তির বাতাবরণ কাজ করছে।
তখন ভাবি, ভিন রাজ্যের নির্বাচন। অথচ এ রাজ্যে তার কী চমৎকার প্রভাব। একসময় তিনি ছবি আঁকতেন, কবিতা লিখতেন। আরও নানা প্রতিভার পরিচয় মাঝে মাঝেই পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এমন দার্শনিকের ভূমিকায় তাঁকে আগে দেখেছেন? আমরা একজন দার্শনিককেও পেয়ে গেলাম। নির্বাচনের সবথেকে বড় পাওনা বোধ হয় এটাই।