সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল, ইতিহাস

শান্তনু ব্যানার্জি

ভ্রমণপিপাসু বাঙালি শীতকাল পড়লেই বেরিয়ে পড়ে এদিক ওদিক। ভিড় জমায় বিভিন্ন পর্যটন স্থানে। শীত পড়তে এখনও কিছুটা দেরি আছে। কিন্তু তাতে কি ! শীতে বেড়ানোর পরিকল্পনাটা সেরে নেওয়া যেতেই পারে এই সময়। কোথায় যাবেন! ভাইজাগ!

vijag3vijag2
ভারতের বন্দর শহর বিশাখাপত্তনমের আধুনিক নাম ভাইজাগ। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে ভাইজাগের সমদ্রুতটকে পূর্ব উপকূলের ‘গোয়া’ বলা হয়। স্মার্ট সিটি ভাইজাগ স্বচ্ছ ভারত মিশনে সারা দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ভাইজাগ পরিচিত এর নয়নাভিরাম সামুদ্রিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য নির্দশনের কারণে। খ্রীঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে কলিঙ্গ সাম্রাজ্যের অধীনে অধুনা ভাইজাগের বিকশিতকরণের ইতিহাস শুরু হয়। যা আজও অব্যাহত। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহ রক্তপাত সম্রাট অশোকের চিন্তা এবং মননকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে তোলে। চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোকে সম্রাট অশোকের যাত্রাপথে বিশাখাপত্তনম (ভাইজাগ) অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার কাজে সম্রাট অশোক বিশাখাপত্তনমে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। তৎকালীন সময়ের ওই স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পকলা আজও অক্ষত রয়েছে। যা যে কোনও ভ্রমণপিপাসুর কাছে বিশেষ আকর্ষণের। এর পরবর্তী সময়ে চোল সাম্রাজ্য, মোঘলদের হাতে বিশাখাপত্তনম আরও বিকশিত হয়ে ওঠে। ১৮ শতাব্দীতে বিশাখাপত্তনমে ফরাসিদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। এর আগে এই শহর নিজামদের অধীনেও ছিল। ১৮০৪ খ্রীস্টাব্দে বিশাখাপত্তনমে ব্রিটিশ কলোনি স্থাপিত হয়। এই ইতিহাসের উল্লেখ করা এই কারণেই সময়ের ঢেউ যখনই বিশাখাপত্তনমের সমদ্রতটে আছড়ে পড়েছে এই শহরের চালচিত্রে নব নব রূপে ফুটে উঠেছে। স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পকলার বিপুল ভান্ডার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আধুনিক ভাইজাগের আনাচে কানাচেতে। তাই এরকম ঐতিহাসিক আর সমুদ্রঘেষা শহরকে দু চোখ দিয়ে না দেখলে জীবনের অনেকটা পরিসরই অপূর্ণ থেকে যায়!

ইস্ট-কোস্ট রেলওয়ে ডিভিশনের সমস্ত ট্রেন বিশাখাপত্তনম স্টেশন হয়ে যায়। ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস, হাওড়া-চেন্নাই সেন্ট্রাল স্পেশ্যাল, করমন্ডল এক্সপ্রেস সহ ৩২ টি ট্রেন ছাড়ে হাওড়া এবং সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে। এছাড়া উড়ান পথেও ভাইজাগ সমগ্র দেশের সঙ্গে যুক্ত। থাকবেন কোথায়! ভাইজাগে প্রচুর হোটেল আছে। তবে হোটেল ভাড়া একটু বেশি।
ভাইজাগে আর কে বিচ সানসেটের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া ইয়ারাভা বিচ রয়েছে। রয়েছে ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্ক, কালিয়াগিরিতে শিব ও দূর্গার মন্দির ভাবিকোন্ডা, টোটলাকোন্ডা বৌদ্ধ স্থাপত্য নির্দশন। রয়েছে ২০০০ বছরের পুরনো শঙ্করাম বৌদ্ধ স্থাপত্য শৈলী। ভোজায়াননাকোন্ডা আর পাভুরাল্লাকোন্ডা বৌদ্ধ নির্দশন। আর তাই দেরি না করে একবারটা ঘুরে আসুন ভাইজাগ।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.