নন্দ ঘোষের কড়চা
অরুণ জেটলি আসলে কে? বড় আইনজীবী, এমন একটা সুনাম বা দুর্নাম আছে (দুর্নাম মানে, আইনটা বোঝেন, কিন্তু ভুলভাল লোকের হয়ে মামলা লড়েন)। কিন্তু তিনি যে অর্থনীতির পন্ডিত, এমনটা বাপু শুনিনি। মোদিবাবু মনে করেছেন, তাঁকে অর্থমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন। যেমনভাবে গ্র্যাজুয়েট না হওয়া স্মৃতি ইরানিকে শিক্ষামন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মন্ত্রী যখন, তখন তো পন্ডিত বলে মানতেই হবে।
জেটলিবাবুর কেটলিতে গরম জল ছিল। কিন্তু কখন যে হাওয়া বেরিয়ে গেছে, টেরই পাননি। তাই নিমেশেই জল ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাজেট না ছাই। ওই তো , দিদিমনি বলে দিয়েছে, শুধু শের আর শায়েরি। রাহুলবাবুও বলে দিয়েছে, ওতে কিছুই নেই।
আমার দিদির মতো প্রতিভা নেই। তাই কেন এই বাজেট খারাপ, অত বলতে পারব না। আমার কাজ হল বুঝে হোক, না বুঝে হোক, গালাগাল দেওয়া। সে যদি অর্থনীতির মতো দুরূহ বিষয় হয়, তবুও। এটুকু বুঝে গেছি, নিন্দেমন্দ করতে গেলে অতকিছু না বুঝলেও চলে। জেটলি নামের মধ্যে জেট আছে। ওইটুকুই। ভাবছেন, আগে একটা বা জুড়ে নিলেই হয়ে যাবে। এতই সহজ? সত্যিই তো, বাজেটের আপনি কী বোঝেন? কখনও থলি হাতে বাজারে গেছেন? কাঁচালঙ্কা কত টাকা কেজি, জানেন? রানাঘাট থেকে লালগোলা, লোকাল ট্রেনে কত ভাড়া, জানেন?
ভোটের সময় বাজেট হলে নাকি ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট করতে হয়। তা মশাই, উত্তরপ্রদেশে ভোট। আর আপনি কিনা ইংরাজিতে ভাষণ দিলেন! কেউ বুঝল? ইংরাজি জানেন, সেটা দেখানোর তো অনেক জায়গা ছিল। এত মুরুব্বিগিরি করার কী দরকার?
আগে বাজেট হত দুপুরের দিকে। ওটা নাকি ব্রিটিশ কালচার। আপনি আনলেন সকালের দিকে। ভাল করলেন। আগে সাধারণ বাজেট আর রেল বাজেট আলাদা হত। আপনি মিলিয়ে দিলেন। আপনার প্রভু–ভক্তি নেই, বোঝাই যাচ্ছে। কোন প্রভুর কথায় করলেন, তাও জানি না। ব্রিটিশদের নিয়ম ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, বোঝা গেল। তাহলে মশাই সুটকেসে করে বাজেট নথি আনতে হল কেন? চটের ব্যাগ বা শান্তিনিকেতনের ঝোলাতে করে আনতে পারতেন। বেশ একটা স্বদেশি স্বদেশি ব্যাপার হত। আর এস এস খুশি হত। কর্পোরেটদের তো খুশি করতে পারলেনই না, আর এস এসকেও পারলেন না।
আপনার মশাই কৃতজ্ঞতা বলে কিচ্ছু নেই। শুরুতেই বাঁচিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সামনে ভোট, তাই বড়সড় ঘোষণায় নিষেধাজ্ঞা। কেমন বেঁচে গেলেন, ভেবে দেখেছেন? নইলে কতকিছু ঘোষণা করতে হত। আরও একজনের প্রতি আপনার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমাদের দিদি। যদি দিদির দল যোগ দিত, বুঝতেই পারতেন কী হতে পারত। সারাক্ষণ হল্লা চলত। এমন বেদবাক্য আর চিৎকার উড়ে আসত, লোকে সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলি ভুলে যেত। খুব তো ইংরাজিতে রিডিং পড়ার ধুম। ওই চিৎকারের মাঝে পারতেন অমন গড়গড় করে রিডিং পড়তে?
বাজেটের শেষে তৃণমূলকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া যেত না?