রক্তিম মিত্র
প্রায় দু বছর আগে থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, যে কোনওদিনই আপনি পদত্যাগ করতে পারেন। অবশেষে সেই দিনটা এল। কিন্তু মাঝখান থেকে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল।
আপনার পদত্যাগে সবথেকে যাঁর বিড়ম্বনায় পড়ার কথা, তিনিই বোধ হয় সবথেকে বেশি খুশি হবেন। তিনি এবার অন্য কাউকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারবেন। মিঠুন, কী দরকার ছিল বলুন তো? রাজ্যসভায় না গেলে আপনার কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত ? বাঙালি আপনাকে মাথায় তুলে রেখেছিল। পরপর চারবার চিত্রতারকাদের মধ্যে সবথেকে বেশি আয়কর দেওয়ার পুরস্কার পেলেন আপনি। উত্তর কলকাতার এক অখ্যাত গলি থেকে উঠে আসা গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী কীভাবে হয়ে উঠলেন বলিউডের সুপারস্টার, সে এক রূপকথার মতোই। সুপারস্টার হয়েও পা রইল মাটিতেই। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিন দশক ধরে। এই বাঙালির মধ্যে অনেক বিভাজন ছিল। কেউ সিপিএম, তো কেউ তৃণমূল। কেউ মোহনবাগান, তো কেউ ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সবমহলেই মিঠুন নামটা বেশ সম্মানের সঙ্গেই উচ্চারিত হত।
অনেকবারই শোনা গেছে, আপনি নাকি রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। বামেরাও পাঠাতে পারত। পাঠায়নি। তৃণমূল পাঠিয়েছে। কৃতজ্ঞতা থাকাই স্বাভাবিক। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার আপনি ছুটে বেড়ালেন প্রচারে। সেই বাজার মাত করা সংলাপ, ‘বোতাম টিপবেন এখানে, সরকার গড়বেন ওখানে।’ তারপর থেকেই আপনি স্বেচ্ছা নির্বাসিত। না সিনেমার পর্দায়, না অনুষ্ঠানে, না সংসদে, না রাজনৈতিক মঞ্চে— কোথাও আপনাকে পাওয়া যায়নি। কখন কোথায় আত্মগোপন করেছিলেন, আপনিই জানেন। কখনও আপনাকে ই ডি ডেকে পাঠাচ্ছে, কখনও আপনি সারদা থেকে নেওয়া পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েও কি হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছেন ? এই বাঙালি কত সহজেই মদন মিত্র আর আপনাকে এক আসনে বসিয়ে দিয়েছে। সত্যিই, এটা আপনার প্রাপ্য ছিল না।
হ্যাঁ, এই বিচ্ছেদ অনিবার্যই ছিল। এর পরেও যদি থেকে যেতেন, আপনার সম্পর্কে অন্যরকম ধারণাই তৈরি হত। শুধু একটাই আক্ষেপ, সময় বেছে নিতে বোধ হয় একটু দেরি হয়ে গেল।