বাঘের ডেরায় থাকতে চান?‌

দিব্যেন্দু দে

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ পড়েছেন? সেই যে আফ্রিকার জঙ্গলের মধ্যে একটা হোটেলে গিয়েছিল সন্তু আর কাকাবাবু! ভারতের মধ্যে যদি এমন অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাহলে চলে যান বান্ধবগড়ের জঙ্গলে।
বান্ধবগড়ে হোটেল, রিসর্ট, লজ অনেক আছে। কিন্তু তা সবই জঙ্গলের বাইরে। জঙ্গলের মধ্যে থাকার সুযোগ যদি চান, তাহলে আপনাকে থাকতে হবে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের হোয়াইট টাইগার ফরেস্ট লজে। নামে ফরেস্ট লজ হলেও আধুনিক হোটেলের সব সুবিধা এখানে পাবেন। অথচ গাছপালায় ঘেরা। নির্জন, গা-ছমছমে। লজে দু রকমের ঘর আছে। কিছু ঘর উঁচু পিলারের উপরে গাছবাড়ির মতো। কিছু ঘর ক্তেজের মতো। যদিও চারিদিকে উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা তবুও, সন্ধ্যের পর ঘরের বাইরে বেরতে গেলে বুক ধুকপুক করে। হাজার হোক এটা তো মানুষের রাজত্ব নয়।

bandhabgarh3
এক সময় এই এলাকার রাজা ছিল চার্জার। তার সারা গায়ে আগুনে রঙের উপরে ছিল কালো কালো ডোরাকাটা দাগ। পর্যটকদের গাড়ির দিকে তেড়ে আসত বলে তার নাম ছিল চার্জার। পর্যটকদের বড় প্রিয় ছিল সে। তাই জঙ্গলের মধ্যে যে স্থানে সে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল, সেই জায়গাটা আজ সাইনবোর্ড দিয়ে চিহ্নিত করা আছে।
আজ চার্জার না থাকলেও তার বংশধররা রাজকীয় মেজাজে ঘুরে বেরায় বান্ধবগড়ের জঙ্গলে। তাদের ভয়ে ত্রস্ত হয়ে থাকে সব পশুপাখি। মানুষদের তারা দয়া করে ছেড়ে দেয় ঠিকই, কিন্তু রাজার মেজাজ বলে কথা, তাই পর্যটকদের নিষেধ করা হয় গাড়ি থেকে না নামতে।

bandhabgarh5
হোয়াইট টাইগার ফরেস্ট লজে থাকার একটা সুবিধা হল, এখানে ঘর বুক করলে সাফারি বুকিং নিয়ে মাথাব্যথা থাকে না। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমই চাহিদা মতো দিনে সাফারির ব্যবস্থা করে দেয়। বান্ধবগড়ে সাফারি করে মানুষ কি দেখতে যায়, সে তো আপনি জানেনই। কিন্তু যদি চার্জারের বংশধরদের দেখতে নাও পান, হতাশ হবেন না। এই জঙ্গলের রুপ অনবদ্য। বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে কাশের বন, শরৎকালে মনে হবে, অপু দুর্গার নিশ্চিন্দিপুর। পলাশগাছের বন, বসন্তে কেমন রং ধরে তা ভাবলেই মন ভালো হয়ে যায়। এই বনের মধ্যে অসংখ্য ময়ূর, ঝাকে ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ, গাছে গাছে হনুমান। আর কপাল ভালো থাকলে রাজার দেখা তো পাওয়া যাবেই।

bandhabgarh2
সাফারির পর লজে ফিরে এসে বসে থাকুন একদম শেষপ্রান্তে কংক্রিট বাঁধানো চত্বরের ওপরে। তার গা ঘেঁষেই চওড়া খাল। তার ওপারেই জঙ্গল। অনেক সময় এখান থেকেই কাকার হরিণ বা বুনো শুয়োর চোখে পড়ে। দেখতে ভালই লাগে। কিন্তু রাতে যখন ডাইনিং হলে খেতে আসবেন, (এখানে খাওয়ার খরচ ঘর ভাড়ার সঙ্গেই ধরা আছে। এলাহি খাওয়া, যা খুশি যত খুশি খান।) তখন অন্ধকার, গাছপালায় ঘেরা পথে আবার শুরু হয় ধুকপুকুনি। ঝপের আড়াল থেকে কেউ নজর রাখছে নাতো? হাজার হোক, হোটেলটা জঙ্গলের মধ্যে। আর এটা ডোরাকাটাদের রাজত্ব।

 মধ্যপ্রদেশ পর্যটন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

মধ্যপ্রদেশ পর্যটন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.