অনির্বাণ সরকার
রাজনৈতিক মহলে তৃণমূলের কয়েকজনকে নিয়ে খুব হাসাহাসি হয়। তাঁদেরকে সিরিয়াসলি নেওয়া হয় না। একজন হলেন মদন মিত্র, অন্যজন ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু কেন জানি না, তৃণমূলের অনেক নেতার তুলনায় এই দুজনকে অনেকবেশি বাস্তববাদি ও দূরদর্শী মনে হয়। এঁরা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট পরিণত। এঁদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত। বাংলাটাও অন্যদের থেকে ভালই বলেন। এঁদের জনসংযোগ ও জনভিত্তিও কাগুজে বাঘেদের তুলনায় অনেক বেশি। অন্তত দলের মহাসচিব যা আবোল তাবোল বকে যান, তার তুলনায় অনেক বেশি যুক্তিনিষ্ঠ মনে হয় ফিরহাদকে।
আপাতত ফিরহাদ হাকিমের কথাতেই আসা যাক। কলকাতার মেয়র হিসেবে যথেষ্টই সফল। সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু গত একবছরে তাঁর কর্মকাণ্ডের কথা মনে করুন। নির্দিষ্ট কোনও কারণে কি তাঁকে মেয়র পদের অযোগ্য মনে হয়েছে ? নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পর যে বিতর্ক, তারপর যেসব কাণ্ড ঘটল, প্রথমদিন থেকেই তার পরিণতি আন্দাজ করতে পেরেছেন একমাত্র ফিরহাদ হাকিম। অন্যান্য তৃণমূল নেতাদের কণ্ঠে যখন প্রচ্ছন্ন সমর্থনের সুর, তখন ফিরহাদ হাকিমের বিবৃতি বেশ মার্জিত। তিনি বললেন, এইসব ঘটনায় বিজেপির হাতই আরও শক্তিশালী হবে। বাকি সত্তর শতাংশ মানুষ বিজেপির দিকে চলে যেতে পারে। তখন আরও সমস্যা হয়ে যাবে।
যেভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসার আবহ তৈরি হচ্ছে, এতে ফের ধর্মীয় মেরকরণ বড় হয়ে দেখা দেবে। এই তোষণের ফলে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের অনেক ভোট ফের বিজেপির বাক্সে চলে যেতে পারে, এই সহজ ব্যাপারটা ফিরহাদ অনুভব করেছেন। প্রকাশ্যে সেই কথা স্বীকারও করেছেন। একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে এমন মন্তব্য করা খুব একটা সহজ ছিল না। তৃণমূলে থেকে তো আরও বেশি কঠিন ছিল। কিন্তু ফিরহাদ যে সহজ সত্যিটা বোঝেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও সেটা বোঝেন বলে মনে হয় না। তিনি যদি শুরুতে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কড়া ব্যবস্থা নিতেন, পরিস্থিতি এত খারাপ হত না।