ওড়িশাকে দেখে একটু শিখতে পারি না!‌

হেমন্ত রায়

গত বছর লকডাউনে একটা অভ্যেস গড়ে উঠেছিল। বাংলা কাগজের সঙ্গে ওড়িয়া কাগজেও চোখ বোলাতাম। না, আমি মোটি ওড়িয়া পড়তে পারি না। বা কাগজের স্টলেও ওড়িয়া কাগজ পাওয়া যেত না। আসলে, এখন তো ই–‌পেপার সহজেই দেখা যায়। তাই গুগলে ওড়িয়া কাগজের ই পেপার সার্চ করলেই বেশ কয়েকটা কাগজ দেখা যায়।

কেন দেখতাম?‌ আসলে, দেখতে চাইতাম, সেখানকার কাগজে রোজ মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের ছবি ছাপা হচ্ছে কিনা। অধিকাংশ দিনই তাঁর কোনও ছবি দেখতাম না। প্রথম পাতায় তো দূরের কথা, ভেতরের পাতাতেও নয়। কোনও কোনও দিন থাকলেও কপির মাঝে একটা ছোট্ট মুখ। অর্থাৎ সেটাও কোনও ইনসিডেন্ট নয়, ফাইল ছবি।

এদিকে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী রোজ কিছু না কিছু করেই চলেছেন। কোনওদিন চক কেটে গোল দাগ দিয়ে দিচ্ছেন। কোনওদিন বাজারে চলে যাচ্ছেন। কোনওদিন চাল, আলু বিলি করছেন। আর রোজ বিকেলে দু’‌ঘণ্টার প্রেস কনফারেন্স তো আছেই। মোদ্দা কথা, ছবির বিরাম নেই। ছবি তোলার জন্য যা যা করা দরকার, তিনি অক্লান্তভাবে করে চলেন।

nabin pattanayek

তারপর পুজো এল। ভোট এল। তারপর আবার করোনা ঢেউ এসে হাজির। কিন্তু অভ্যেসটা বদলানোর নয়। যেগুলো অনায়াসে গোপনে করা যেত, সেগুলোও তিনি ঢাক পিটিয়ে করেন। আসলে, ছবি তোলার কোনও সুযোগই হাতছাড়া করতে চান না।

একদিকে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। প্রচারের আড়ালে থেকে নীরবে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। করোনাই হোক বা ইয়াস। ফনি হোক বা আমফান। প্রশাসনের যা যা করণীয়, নিঃশব্দে করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর যা যা করণীয়, কোনওকিছুতেই ত্রুটি রাখেননি। ‘‌লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’‌ এর দোহাই দিয়ে কথায় কথায় ছবি তোলার জন্য বেরিয়ে পড়েননি।

বাংলার কাগজগুলোও তেমনি। সেই সব সাজানো ছবি ঢাউস করে ছাপতে হয়। না ছাপলে বিজ্ঞাপন বন্ধ। চ্যানেলগুলোর অবস্থা ভাবুন। বিকেলের দিকে প্রায় দু’‌ঘণ্টা তিনি একাই নিয়ে নিচ্ছেন। লাইভ দেখাতেই হবে। নইলে কী কী খাড়া নেমে আসবে, চ্যানেল মালিকরা বেশ ভালই জানেন। এমনিতে অনুষ্ঠানের মাঝে ঘন ঘন বিজ্ঞাপন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ইভিনিং শো–‌এর মাঝে বিজ্ঞাপন দিলে সমূহ বিপদ। তিনি জানতে পারলে হয়ে গেল।

মাঝে মাঝে তুলনা করি। ওড়িশা কত ছোট রাজ্য। অথচ কীভাবে এগিয়ে চলেছে। কোমর বেঁধে কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করা নেই। খেউড় করা নেই। অফিসারদের অসম্মান করা নেই। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীকে রোজ রোজ ভাষণ দিতে হয় না। নিজের ছবিতে রাজ্যকে মুড়ে দিতে হয় না। সরকারি মঞ্চ থেকে ভুলভাল বকতে হয় না। রাজনৈতিক তরজা করতে হয় না। সেখানকার কাগজে রোজ মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপতে হয় না। ছবি না ছাপলেও বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায় না। এই ওড়িশাকে দেখে আমরা কি কিছুই শিখতে পারি না!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.