এবার হয়ত রাজ্য সরকারই সিবিআই চাইবে, কারণ এমন নিরাপদ বন্ধু সত্যিই বিরল

রক্তিম মিত্র

একেবারে খাঁটি কথাটাই বলেছেন নজরুল সাহেব। মানে, নজরুল ইসলাম।

দীর্ঘদিন পুলিশের নানা দপ্তরে সুনামের সঙ্গে চাকরি করেছেন। সৎ পুলিশ বললেই যে কয়েকটা মুখ সবার আগে ভেসে ওঠে, সেই তালিকায় সামনের সারিতেই থাকবে এই নামটা।

সেদিন একটা ভিডিও ক্লিপিং হঠাৎ চোখে পড়ল। সেখানে নজরুল সাহেব বলছেন, এসএসসি নিয়ে যা যা হচ্ছে, এর পেছনে অফিসাররা নিশ্চয় জড়িয়ে আছেন। কিন্তু আসল মাথা কখনই তাঁরা হতে পারেন না। শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া এমন ঢালাও বেআইনি নিয়োগ তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঠিক তেমনই শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষেও সম্ভব ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন বা নির্দেশ ছাড়া এমন ঢালাও বেআইনি নিয়োগ করা।

মাস কয়েক আগে উপেন বিশ্বাসের ভিডিও নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। তিনি জনৈক রঞ্জনের কথা তুলে ধরেছিলেন। এই রঞ্জন নাকি টাকার বিনিময়ে শয়ে শয়ে লোককে শিক্ষকতার চাকরি করে দিয়েছেন। উপেনবাবুর সাফ কথা, এই রঞ্জন আসলে কেউ নয়। তাঁর এত ক্ষমতা হয় কীভাবে?‌ এবং এই টাকার খুব সামান্য ভাগই হয়ত রঞ্জন পেত। এই টাকার সিংহভাগটাই জমা হত অন্য কোথাও, অন্য কোনও প্রভাবশালীর কাছে। নইলে, সবকিছু এত মসৃণভাবে সম্ভব হত না।

দুই প্রাক্তন আইপিএসের ইঙ্গিতটা পরিষ্কার। এই রঞ্জনরা নিছকই বোড়ে মাত্র। এই অফিসাররাও তেমন কিছু নন। তাঁরা শুধু নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র। এমনকী শিক্ষামন্ত্রীও নিজের পছন্দের কজনকে নিয়োগপত্র দিতে পেরেছেন, ঘোর সন্দেহ আছে। তাহলে নির্দেশটা আসত কোত্থেকে। প্রশ্ন গুলো সহজ। আর উত্তরও তো জানা।

কিন্তু এই জানা উত্তর সিবিআই কবে আর ঠিকঠাক লিখতে পেরেছে?‌ লোকদেখানো দু একটা জেরা করা, বারবার তারিখ পিছিয়ে যাওয়া, শেষমেশ চার্জশিটে অষ্টরম্ভা। মোটামুটি গত কয়েক বছরে এটাই সিবিআই–‌এর দস্তুর হয়ে উঠেছে। তাই রঞ্জনদের নিয়ে হইচই হবে। আর আসল পান্ডাদের ছোঁয়াও যাবে না। উল্টে তাঁরা হুঙ্কার দেবেন, সিবিআই–‌ইডি কী করতে পারল?‌

সারদা বলুন বা নারদা। গরু বলুন বা কয়লা। সব জায়গাতেই সিবিআই নামক প্রতিষ্ঠানটি চরম অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে।

প্রশ্ন হল, এতখানি ঘুমিয়ে থাকা কি সত্যিই সিবিআইয়ের পক্ষে সম্ভব ছিল?‌ সিবিআইকে যাঁরা চালান, সেই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ বা অনুমোদন ছাড়া এতখানি অপদার্থতা দেখানো বোধ হয় সিবিআইয়ের পক্ষেও সম্ভব ছিল না।

সেদিন আর দূরে নেই। যেদিন খোদ রাজ্য সরকার সিবিআই চাইবে। কারণ, এতদিনে এই সারসত্যটুকু তারা বুঝে গিয়েছেন, সিবিআইযের হাতে তদন্তভার থাকলেই তাঁরা সবথেকে বেশি নিরাপদ।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.