উপেক্ষা করুন, কুকথার স্রোত থেমে যাবে

সৃজন শীল

ভোটের দামামা আগেই বেজে গেছে। দিন ঘোষণার আগেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। প্রচারও শুরু হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল, যখন দেওয়াল লিখন ছিল এই প্রচারের বড় একটা হাতিয়ার। পাড়ায় পাড়ায় লেখা হত নানারকমের ছড়া। সেই ছড়ায় যেমন রঙ্গ রসিকতা থাকত, তেমনই কখনও কখনও তা হয়তো একটু মাত্রা ছাড়িয়ে যেত। আবার কোথাও হয়তো ছেলে ছোকরারা লিখে ফেলেছে। বড়দের ধমক খেয়ে পরে মুছেও ফেলতে হয়েছে।

কিন্তু হাতে হাতে স্মার্টফোন। এই আবহে দেওয়াল যেন অনেকটাই ফিকে। এখন মোবাইল বেয়ে আপনার হাতে দিনভর এসে চলেছে নানা রকমের পোস্ট। এটাই হাইটেক প্রচার। নির্বাচনী ভাষণ আগেও ছিল। তাতে একে অন্যকে দেখে নেওয়ার হুঙ্কার ছিল। এখন সেই হুঙ্কার এসে পৌঁছে যাচ্ছে আপনার বাড়িতে। টিভিতে সারাদিন সেই প্ররোচনা মূলক ভাষণের ক্লিপিং। এক দৃশ্য, এক সংলাপ সারা দিনে অন্তত তিনশোবার দেখানো হচ্ছে। সেটাকে কাউন্টার করে পাল্লা কোনও কুকথা বলা হলে সেটাকে ঘিরেও দিনভর প্রচার। অর্থাৎ, আপনি যদি রুচি ও শালীনতা মেনে প্রচার করেন, তাতে চ্যানেলের টিআরপি উঠবে না। নেতা নেত্রীরা যত কদর্য প্রচার করবেন, যত অকথা–‌কুকথার ফোয়ারা ছোটাবেন, আর আপনি–‌আমি যত রসিয়ে রসিয়ে তা উপভোগ করব, তত চড়চড় করে বাড়বে টিআরপি।

ভোটের সেই দেওয়ালের বদলে সোশ্যাল মিডিয়ার সেই দেওয়াল। আসলে ওয়াল। দিনভর যে যা পারছে, লিখে চলেছে। নানা বিকৃত রুচির পোস্ট, মিম তৈরি হয়েই চলেছে। কেউ কেউ যেমন বিক্ষিপ্তভাবে বলছেন, তেমনই সব দলেরই আছে সাইবার সেল। অর্থাৎ, ডিজিটাল লেঠেলবাহিনী। সংগঠিত উপায়েও সেখানেও অকথা–‌কুকথার ফোয়ারা চলছে। আপনি দেখতে না চাইলেও দেখতে হচ্ছে। শুনতে না চাইলেও শুনতে হচ্ছে।

কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ, এই মাপকাঠিও মাঝে মাঝে গুলিয়ে যাচ্ছে। ভোট দিতে দেব না, প্রকাশ্যে কেউ কেউ এমন হুমকি দিচ্ছেন। টিভিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনভর প্রচারও পাচ্ছেন। খুচরো নেতা থেকে আরও বড় মাপের নেতা হয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা এই হুমকি দিচ্ছেন, তাঁরা বোধ হয় ভেবেই নিয়েছেন, প্রশাসন কিছু করবে না, নির্বাচন কমিশন কিছু করবে না, এমনকী নিজের দলও শাসন করবে না। উল্টে বাহবা দেবে।

প্রশ্ন হল, এই ভাষা সন্ত্রাসে কি লাগাম দেওয়া যায় না? প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশনের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনই দায়িত্ব রয়েছে বিভিন্ন দল ও গণমাধ্যমেরও। এইসব অকথা–‌কুকথা যেন নতুন করে উৎসাহ না পায়, সেটা দেখাও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। পাশাপাশি আমরা, অর্থাৎ আম নাগরিক। আমরা যে কেউ যে কোনও দলের সমর্থক হতে পারি। ‌কিন্তু নিম্নরুচির প্রচারকে আমরাও উৎসাহিত করব না, বরং ধিক্কার দেব, এই মানসিকতা আমরাও যদি দেখাতে পারি, কুকথার স্রোত আপনিই থেমে যাবে।  

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.