রাজ্যপালের পদ নিয়ে নানা বিতর্ক। অনেকে মনে করেন, এই পদের দরকার নেই। কিন্তু বিদ্যাসাগর রাও বুঝিয়ে দিলেন, এখনও রাজ্যপাল চাইলে একটা রাজ্যকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল এই পদের গুরুত্বকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিলেন। লিখেছেন প্রসূন মিত্র।।
হ্যাঁ, এরকম একটা রায়ের অপেক্ষাতেই ছিলাম। কোথাও একটা রাশ টানার দরকার ছিল। আমাদের দেশে গণতন্ত্র এমন একটা পথে চলছে, যেখানে যে যা পারছে, তাই করে চলেছে। কারও ইচ্ছে হল, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হবেন, বাকিরাও ধেই ধেই করে নাচতে লাগলেন। আদৌ তাঁর যোগ্যতা আছে কিনা, রাজ্যের মানুষ আদৌ তাঁকে চান কিনা, তা বিচার্য নয়। ভাগ্যিস সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করল। নইলে হয়ত শপথ নিয়েই ফেলতেন।
ধন্যবাদ জানাতে চাই রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওকে। এমনিতে এই পদের তেমন গুরুত্ব নেই। কিন্তু কিছু কিছু ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ আসে, যখন তাঁকে উপযুক্ত ভূমিকা নিতে হয়। বিদ্যাসাগর রাও রাজ্যপাল পদের গুরুত্বকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিলেন। তিনি প্রমাণ করলেন, রাজ্যপাল চাইলে একটা রাজ্যকে বিপর্যয়ের হাত থেকে অনেকটাই বাঁচিয়ে দিতে পারেন।
যদি শশিকলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যেতেন, তাহলে কী কী হতে পারত! সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা রাজ্যে ভয়ঙ্কর অরাজকতা শুরু হয়ে যেত। দাঙ্গা লাগত, আগুন জ্বলত, পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত। কিছু হলেই তামিলনাড়ুতে যা হয়, আবেগের বন্যা বইত। শশী হয়ত তাঁর পছন্দের বশংবদ কাউকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে দিতেন। মনে রাখবেন, একজন অযোগ্য লোক সবসময় অযোগ্য লোকেদেরই বেছে নেয়। শশীও তাই করতেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শপথ নেওয়ার জন্য তাঁর হুড়োহুড়ি দেখে সত্যিই লজ্জা হচ্ছিল। যেভাবে বিধায়কদের কব্জা করে, বন্দী করে রেখেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলে না জানি কী করতেন।
বাঁচিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনিতেই আমাদের দেশে বিচার প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘমেয়াদি। অনেক মামলাতে অহেতুক অনেকটা সময় চলে যায়। সময়মতো বিচার পাওয়া যায় না। সেই সুযোগটাই অনেকে নিয়ে থাকেন। তবু অন্তত এক্ষেত্রে বড়সড় একটা লজ্জার হাত থেকে তামিলনাড়ুকে বাঁচিয়ে দিলেন বিচারপতি। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এভাবেই এগিয়ে আসুক আদালত। এই ভূমিকাতেই আদালতকে দেখতে চাই।