প্রচার বড় সাঙ্ঘাতিক জিনিস। আর এই প্রচারের পেছনে ছুটতে গিয়ে কত লোক রাতারাতি হিরো হয়েছে। আবার বিপর্যয়ও নেমে এসেছে। তেমনই একজন অফিসার হলেন সঞ্জয় দত্ত। ফরেস্ট রেঞ্জার। গত কয়েকবছরে এতবার শিরোনামে এসেছেন, আর কোনও বনকর্তা ধারেকাছেও নেই। রোজ কিছু না কিছু করেই চলেছেন। কোনওদিন হাতির দাত উদ্ধার করছেন। কোনওদিন ছদ্মবেশে চোরাশিকারি ধরছেন। কোনওদিন অজগর গলায় পেঁচিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন। কোনওদিন চিতাবাঘ ধরার ভিডিও করতে গিয়ে আক্রাত হচ্ছেন। নিজেই ছবি তোলেন, তোলান। কাগজের রিপোর্টারদের পাঠিয়ে দেন। ঘটা করে প্রেস কনফারেন্স করেন। কাগজে সেসব ছবিও বেরোয়। টিভিতেও দেখা যায়।
এবার তিনি হানা দিয়েছিলেন এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ী স্বপ্না বর্মনের বাড়িতে। তাঁর বাড়িতে নাকি কাঠ মজুত করা আছে। রেঞ্জার গিয়ে সেই কাঠের অনুমতি পত্র দেখতে চেয়েছেন। ব্যাস, টিভিতে ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেল। স্বপ্নার বাড়িতে হানা দিল বনদপ্তর। বেআইনি কাঠ উদ্ধার। এশিয়ান গেমসে পদকজয়ীর বাড়িতে যদি বেআইনি কিছু উদ্ধার হয়, তার তো নিউজ ভ্যালু আছেই। রেঞ্জার সাহেব সেটা ভালই বোঝেন। তাই অ্ন্যদের ফুটেজ খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে নিজেই চলে গেলেন। বাইট হল, ছবি হল। ছড়িয়ে গেল।
পাচারকারী ধরা এক জিনিস। আর এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ীর বাড়িতে হানা দেওয়া আরেক জিনিস। এটা ঘটনা, নানা কারণে স্বপ্নার পরিবারের ওপর গ্রামের লোকেদের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিছুটা প্রতিবেশীদের স্বভাবজাত ঈর্ষা। বাকিটার জন্য স্বপ্নার পরিবারও দায়ী। জীবন যাপন বদলে গেলে পাড়ার লোকের চোখে লাগবেই। ধরে নেওয়াই যায়, গ্রামেরই কেউ ফোন করে হয়ত খবর দিয়েছে। রেঞ্জার সাহেবও খবরের গন্ধ পেয়ে চলে এলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এই অতি তৎপরতা হয়ত ব্যুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে বিষয়টি শুধু উত্তরবঙ্গ এডিশনে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাছাড়া, স্বপ্না কাকে ফোন করে বসবেন, বলা মুশকিল। সেক্ষেত্রে এই অতি তৎপরতার মাশুল দিতে হতেই পারে।