মোদি ও মমতার কপালে চিন্তার ভাঁজ

সুগত রায়মজুমদার
এবারের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া হচ্ছে। দু’জনই খুব চাপে আছেন। একজন ভাবছেন, দেশের শাসনক্ষমতায় কি পুনরায় ফেরা যাবে? আর একজন ভাবছেন, রাজ্যে কি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি–কে কীভাবে ঠেকাব? এজন্য দু’জনেই খুব চাপে আছেন।
প্রথমে নরেন্দ্র মোদি ভাবছেন, পুলওয়ামায় যে ৪২ জন সেনা জওয়ানের কনভয়ে জঙ্গিদের আক্রমণে প্রাণ গেল আগাম সতর্কবার্তা পেয়েও, তাতে সাধারণ মানুষ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের টোটকা খাচ্ছেন না। মানুষ বলছে, সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও কেন জঙ্গি–আক্রমণ প্রতিহত করা হল না? কেন সতর্ক করা হল না সেনাবাহিনীকে? কিছু বোদ্ধা সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে কৌতূহল উদ্রেক হয়েছে, কীভাবে ঘটল এই ঘটনা!‌ তা হলে কি নির্বাচনের জন্যই এটা ঘটানো হয়েছে? এরকম গুঞ্জন কিন্তু শোনা যাচ্ছে। আর এটা নিয়ে সর্বাগ্রে প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূলনেত্রী। সুতরাং এতে মোদির কপালে ভাঁজ। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। মোদি–জমানায় যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যেমন সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ঢুকবে, কর্মসংস্থান নেই, বহু মানুষ চাকরি খুইয়েছেন। ৪৫ বছরে রেকর্ড বেকারত্ব। পরিকল্পনা ছাড়া নোটবন্দীর দুরূহ ফল, এতে বহু ছোট ব্যবসা উঠিয়ে দিতে হয়েছে। জিএসটি পরিকল্পনামাফিক না করে বহু শিল্প এখন ক্ষতিগ্রস্ত। ঠিকমতো প্রয়োগ করা হয়নি। এ ছাড়াও কালো টাকা ঘরে ঢোকেনি, এ সব নিয়ে তিনি উদ্বেগে আছেন। আর তারই ফলশ্রুতি ৫টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি মোদির কপালের ভাঁজ চওড়া করতে সাহায্য করেছে। রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায়’ প্রকল্পও মোদির কপালে ভাঁজ ফেলেছে। রাহুল গান্ধীও বলেছেন, ৫ কোটি গরিব পরিবারের অ্যাকাউন্টে বছরে ৭২ হাজার টাকা ঢুকবে, কৃষকদের জন্য আলাদা বাজেট হবে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেশি করে বরাদ্দ এবং ২২ লক্ষ কর্মসংস্থান ঘোষণা সাধারণ মানুষকে ভরসা জোগানো মোদিকে আরও বেশি চাপে ফেলেছে। রাহুলের এই প্রকল্প নিয়ে বিজেপি খুব চিন্তায় আছে। এর বিরুদ্ধে তেমনভাবে সোচ্চার হতেও পারছেন না। আর সেজন্যই কোনও পথ না দেখে সেনাবাহিনীর সাফল্যকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে। এই সব চিন্তাই বিজেপি–র কপালে চওড়া ভাঁজ ফেলেছে।

mamata modi
আর মমতা ব্যানার্জি যে কোনও সভায় গিয়ে বক্তব্য রেখে তাঁর ৮ বছরের কীর্তির হিসেব দিতে আরম্ভ করেছেন। তাঁর সময়ে এস এস সি চাকরিপ্রার্থীরা ২৮ দিন অনশন করেন। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে অনশন তুলতে বাধ্য হন। তাঁদের কারও নাম প্যানেলে, কারও নাম ওয়েটিং লিস্টে। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা যখন যোগ দিতে চাইছেন, তখন তাঁদের বলা হচ্ছে প্যানেলে বা ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা মানেই চাকরির উপযুক্ত নয়। প্রশ্ন উঠছে, যাঁরা এসএসসি পরীক্ষার্থী, তাঁরা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, গ্র্যাচজুয়েশনে ভাল ফল করেই চাকরির আবেদন করেন। তাঁরাই তো মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে প্রতি বছর পুরস্কার নিচ্ছেন। তা হলে কি তাঁরা উপযুক্ত নন? এই যুক্তি কখনই খাটে না তাঁদের ক্ষেত্রে। তা হলে বলতে হবে, এই শিক্ষাব্যবস্থায় ত্রুটি আছে। এই সব ঘটনাই মমতা ব্যানার্জির কপালের ভাঁজ আরও চওড়া করছে।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানেন, সাধারণ মানুষ সবচেয়ে আগে চান কর্মসংস্থান। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তিনি ৪০ শতাংশ চাকরি দিয়ে দিয়েছেন। বাকিগুলি করবেন। এটা যে ভাঁওতা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেজন্যই এ সব আড়াল করার জন্যই তিনি নিজেই সন্দিহান এবারের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে। সেজন্যই প্রথমেই ঘোষণা করেছেন ‘বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ’ পাবই। আর তিনি প্রতিটি নির্বাচনী সভায় যে ভাষায় মোদিকে আক্রমণ করছেন, তাতে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি মোদির ওপরে পড়তে বাধ্য। মোদি এত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেও ভাল ফল করার আশা করছে সাধারণ মানুষ। গতবারের লোকসভা নির্বাচনে সব দল যেভাবে মমতা ব্যানার্জির দলকে আক্রমণ করেছিল সারদা ও নারদা নিয়ে, তাতে ফল উল্টে মমতার দল তৃণমূল ৩৪টি আসন পেয়েছিল। সেই সহানুভূতিটা মমতার দল পেয়েছিল। এবার কি তা হলে বিজেপি–র পক্ষেই যাবে এই সহানুভূতি? সময়ই বলবে। ২৩ মে পর্যন্ত সকলকে অপেক্ষা করতে হবে।

 

(‌ওপেন ফোরাম। পাঠকের মুক্তমঞ্চ। নানা মত, নানা দৃষ্টিকোণ উঠে আসতে পারে এই কলামে। মতামতের দায়িত্ব লেখকের। যে কোনও বিষয়ে আপনিও মতামত দিতে পারেন। তবে, তথ্যে ভেজাল না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। মতামত প্রকাশে রুচি ও শালীনতা থাকাটাও জরুরি।)‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.