একটা উত্তম কুমার ছিলেন, তাই উতরে গেছেন

‌নন্দ ঘোষের কড়চা

(উত্তম ছাড়া সুচিত্রা অচল। ‌অথচ, কত বায়নাক্কা!‌ উত্তমের চেয়ে বেশি টাকা চাই। পোস্টারে আগে নাম চাই। অন্যদের সঙ্গে ছবি হিট হল না কেন?‌ নন্দ ঘোষের আক্রমণের শিকার এবার সুচিত্রা সেন।)‌

মুনমুন সেন যৌবনে সুন্দরী ছিলেন সে বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। বাঙলা সিনেমা জগতে তাঁর মতো সুন্দরী খুব কমই এসেছেন। কিন্তু অভিনয়ের কথা উঠলেই সবাই একবাক্যে বলে, সুচিত্রা সেনের মেয়ে এত বাজে অভিনয় করে কী করে? কেউ আবার বলে, সুচিত্রা সেনের মেয়ে এত ন্যাকা হয় কী করে?

এইসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে। ভালো অভিনয় করতে না পারা এবং ন্যাকামি দুটো গুণই মুনমুন তাঁর মার থেকে পেয়েছেন। হ্যাঁ, নন্দ ঘোষ অপ্রিয় কথা বলতে ভয় পায় না। সুচিত্রা সেন অতি সাধারণ মানের অভিনেত্রী এবং তিনি বাঙালি নায়িকাদের ন্যাকামির গুরুমাতা।

প্রথমেই আসুন ন্যাকামির কথায়। প্রেম তো অনেকেই করেছেন। প্রেমিকার সঙ্গে বাইকে চেপে ঘুরতেও গেছেন, ঘুরতে ঘুরতে হয়তো গান গেয়েছেন। কিন্তু উত্তমের বাইকের পিছনে বসে সুচিত্রা আলজিভ বের করে যেমন হাসছিলেন, অমন হাসি কারো প্রেমিকা হাসেনি। হাসেনি কারণ ন্যাকার হদ্দ না হলে অমন হাসি হাসা যায় না। দৃশ্যটা উতরে গেছে হেমন্তর গান আর উত্তমের অসাধারণ লিপের জন্য। নইলে সাউন্ড বন্ধ করে দেখুন, কেমন অসহ্য লাগে।

সপ্তপদী সিনেমাতেই, উত্তম ফুটবল খেলছেন, আর সুচিত্রা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে বিছিত্র মুখভঙ্গি করছেন। জীবনে অনেক খেলা দেখেছি অমন দর্শক কোনওদিন দেখিনি। ধন্যি মেয়েতে জয়া ভাদুড়িও তো খেলা দেখছিলেন। কই অমন ঠোঁট বাঁকানো চোখ নাচানো তো করেননি। এবার আসুন অভিনয়ের প্রসঙ্গে। সুচিত্রা অভিনয় না জানলে তাঁর ছবি হিট করল কেমন করে? উত্তর সহজ, সেই যুগে দারুণ সব গল্প, দারুণ সব পরিচালক, গীতিকার, গায়ক এবং অবশ্যই উত্তমকুমার। এঁরাই ছবিগুলো হিট করিয়েছে। উত্তমকুমার ছাড়া সুচিত্রা কটা সিনেমা করেছেন হাতে গুনে বলা যাবে। সাতপাকে বাঁধা, দত্তা, প্রণয় পাশা, দীপ জ্বেলে যাই, ফরিয়াদ, উত্তর ফাল্গুনী, দেবী চৌধুরানী। উত্তর ফাল্গুনীতে আবার ডবল রোল। এর মধ্যে বুড়ি সুচিত্রা আর সাত পাকে বাঁধা ছাড়া একটাতেও ভালো অভিনয় করতে পারেননি।

আচ্ছা, বাংলার সেরা তিন পরিচালক বললেই এককথায় কাদের কথা উঠে আসে?‌ সত্যজিৎ রায়, ঋত্ত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন। এই তিনজন যখন ছবি করছেন, ঠিক তখনই চুটিয়ে অভিনয় করছেন সুচিত্রা। কই, এই তিনজন তো কোনও ছবিতেই সুচিত্রাকে নেননি। সত্যজিৎ রায় নাকি একবার নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু এমন সব বায়না ধরেছিলেন, সত্যজিৎ আর ও মুখো হননি।

সাফ কথা, উত্তম না থাকলে সুচিত্রা অচল। অথচ হরেক বায়নাক্কা। উত্তমের থেকে বেশি টাকা চাই। পোস্টারে নাম আগে থাকবে। তাঁর লিপে দুটো তিনটে গান থাকতে হবে। লিড রোল ছাড়া করব না। কিন্তু অভিনয়? সত্যিকারের মহানায়িকা হলে, অন্যদের সঙ্গে ছবি হিট হত। যেমন হত উত্তমের। সুচিত্রার অভিনয় জীবনের তিনটে সম্বল। সন্ধ্যার গান, উত্তমের অভিনয় আর ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ টেরিয়ে তাকানো। যে তাকানো উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছেন তাঁর মেয়ে মুনমুন সেন।

(‌নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি ফিচার। নন্দ ঘোষের কাজই হল সবকিছুকেই একটু বাঁকা চোখে দেখা। তাঁর শিকারের তালিকা থেকে কারও নিস্তার নেই। এমনকী সুচিত্রা সেনেরও নিস্তার নেই। এই কলামকে নিছক মজা হিসেবেই দেখুন।)‌‌‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.