কুন্তল আচার্য
জটায়ু বললেই সবার আগে কার মুখটা ভেসে ওঠে? বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। এই প্রশ্নটা নিয়ে কোনও বিতর্ক বা দ্বিমতও নেই। একমুহূর্তে একটা নামই উঠে আসবে— সন্তোষ দত্ত।
কোনও একটা চরিত্রে কেউ অনেকগুলো ছবিতে কাজ করলে তিনি অনেকসময় মিথ হয়ে ওঠেন। কিন্তু সন্তোষ দত্ত তো জটায়ুর ভূমিকায় ছিলেন মাত্র দুটি ছবিতে। সোনার কেল্লা ও জয়বাবা ফেলুনাথ। কিন্তু ওই যে, ওই দুটি ছবিতেই একটা স্থায়ী ছাপ ফেলে গেছেন।
সন্তোষ দত্তর মৃত্যুর পর সত্যজিৎ রায় আক্ষেপ নিয়েই বলেছিলেন, ‘সন্তোষই চলে গেল। আর কার জন্য ফেলুদা করব!’ সত্যিই আর তিনি কোনও ‘ফেলুদা’ করেননি। এমনকী করার কথা ভাবেনওনি। পরের দিকে সন্দীপ রায় প্রথমে টিভিতে ফেলুদাকে নিয়ে অনেকগুলো টেলিফিল্ম করেন। তখন বেছে নিয়েছিলেন রবি ঘোষকে। পরে বড় পর্দাতেও আসে একের পর এক ছবি। সেখানে বেছে নিয়েছিলেন বিভু ভট্টাচার্যকে। কিন্তু রবি ঘোষও চলে গেলেন। বিভু ভট্টাচার্যও চলে গেলেন। অদ্ভুত একটা শূন্যতা যেন নেমে এল।
এবার জটায়ু কে হবেন? এক দশকের বেশি সময় ধরে এই প্রশ্নটাই যেন তাড়া করেছিল সন্দীপ রায়কেও। তিনিও একটা সময় ভেবে নিয়েছিলেন, জটায়ু পাওয়া এতই যখন কঠিন হয়ে পড়েছে, তার থেকে জটায়ুকে ছাড়াই বরং ফেলুদাকে আনা যাক। তাই পরের দিকের ছবিগুলোয় কোনও জটায়ু ছিল না। ফেলুদার ভূমিকাতেও কখনও দেখা গেছে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে, কখনও আবির চ্যাটার্জিকে।
এবার ওয়েব সিরিজেও হাজির ফেলুদা। এবার অবশ্য সন্দীপ রায়ের হাত ধরে নয়। অনেকদিন ধরেই ফেলুদা নিয়ে ছবি করার কথা বলে আসছিলেন সৃজিত মুখার্জি। বড় পর্দায় না হোক, অন্তত ছোট পর্দায় ফেলুদা করার সুযোগ পেলেন। ফেলুদা হিসেবে বেছে নিলেন টোটা রায়চৌধুরিকে। আর জটায়ু হলেন একেনবাবু খ্যাত অনির্বাণ চক্রবর্তী?।
কতখানি দাগ কাটল? বেশি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সরাসরি বলাই ভাল, মোটেই দাগ কাটার মতো নয়। একেনবাবু হিসেবে অনির্বাণ যথেষ্ট সফল। কিন্তু জটায়ু হিসেবে একেবারেই নয়। কেমন সারাক্ষণ একটা ভাঁড়ামো করে গেলেন। জটায়ুর সেই স্বভাবসিদ্ধ সরলতা অন্তত অনির্বাণের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবটাই যেন আরোপিত। তাই নির্মল হাস্যরসটাই পাওয়া গেল না।
বোঝা গেল, ভবিষ্যতে হয়ত ফেলুদার বিকল্প পাওয়া গেলেও যেতে পারে। কিন্তু জটায়ুর বিকল্প পাওয়া সত্যিই কঠিন। সেই কতকাল আগে সত্যজিৎ রায় এই সারসত্যটা বুঝেছিলেন।