মূলস্রোত মিডিয়ার অজ্ঞতার জন্যই ব্রাত্য থাকেন শরিকরা

জ্যোতির্ময় রায়

মূলস্রোত মিডিয়া থেকে অনেক খবর কোথায় যেন ভ্যানিস হয়ে যাচ্ছে। কেন সেইসব খবর হারিয়ে যাচ্ছে, তা তাঁরাই জানেন।

বিজেপির কর্মসূচি যতখানি জায়গা পায়, তার এক শতাংশও জায়গা পায় না বামেদের খবর। এখন না হয় তারা মূল বিরোধী দল। এখন না হয় তাদের ৭০ খানা বিধায়ক। কিন্তু দু’‌বছর আগেও তাদের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৩। ২০১৬–‌র নির্বাচনে এই তিন কেন্দ্রের বাইরে আর কোথাও দ্বিতীয় স্থানেও ছিল বলে মনে পড়ছে না। তারপরেও পাঁচ বছর ধরে যে পরিমাণ প্রচার পেয়েছে, বাম–‌কংগ্রেস জোট আশির ওপর আসন নিয়েও তার দশভাগ প্রচার পায়নি।

সিপিএমের কর্মকাণ্ড যদিওবা কিছুটা প্রচার পায়, শরিক দলগুলির ক্ষেত্রে তো অদ্ভুত এক কার্পণ্য। সম্প্রতি আরএসপি–‌র রাজ্য সম্মেলন হয়ে গেল বালুরঘাটে। এই রাজ্য সম্মেলনের তাৎপর্য এই প্রজন্মের পক্ষে হয়ত বোঝাটা কঠিন। আগে এইসব সম্মেলনকে ঘিরে কত খবর হত। প্রথম পাতায় সেসব উঠে আসত। এখন ভেতরের পাতাতেও জায়গা পায় না।

কে হতে পারেন রাজ্য সম্পাদক?‌। বিশ্বনাথ চৌধুরি যে আর সম্পাদক থাকছেন না, সেটা একশো শতাংশ নিশ্চিত ছিল। তাহলে নতুন সম্পাদক কে?‌ মনোজ ভট্টাচার্য এখন কেন্দ্রীয় সম্পাদক। তিনি যে আর রাজ্য সম্পাদক হবেন না, সেটাও নিশ্চিত ছিল। লড়াইয়ে ছিলেন সুভাষ নস্কর। কেউ কেউ বলছিলেন অশোক ঘোষের কথাও। কিন্তু নতুন সম্পাদক হলেন তপন হোড়।

পরিষদীয় রাজনীতির যাঁরা অল্প হলেও খোঁজ রাখেন, তাঁদের কাছে নামটা অপরিচিত নয়। বোলপুরের এই দীর্ঘদিনের বিধায়ক পরিষদীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। দলের হুইপও ছিলেন। ফ্লোর কোঅর্ডিনেশনের ক্ষেত্রে তাঁর দারুণ একটা ভূমিকা ছিল। বয়সের ভারে অনেকটাই প্রবীণ। তাছাড়া, নির্বাচনে হারের ফলে সেভাবে প্রচারেও নেই। ফলে, যাঁদের ফেসবুক দেখে রাজনৈতিক জ্ঞানের হাতেখড়ি, তাঁরা নাও চিনতে পারেন।

নম নম করে দু চার লাইনের খবর হয়ত কোথাও কোথাও ছিল। কিন্তু কোথাও ছবি খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন না হয় সম্মেলন পর্ব চলছিল। পরে কি আলাদা করে তাঁর সঙ্গে কথা বলে একটা প্রতিবেদন তৈরি করা যেত না?‌ দুশো শব্দ লেখা হলে কি মমতা ব্যানার্জি খুব রেগে যেতেন?‌ সব বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিতেন?‌ মনে হয় না। তাঁকে এতখানি খারাপ ভাবারও কারণ নেই। তাহলে এসব বিষয় কাগজে উঠে আসে না কেন?‌ স্রেফ অজ্ঞতা। এমন একশ্রেণির হাতে কাগজ বা মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে, যাঁদের কাগজ পড়ার অভ্যেসটাও হয়ত সেভাবে ছিল না। তাঁরা পুরনো লোকেদের সেভাবে চেনেনও না। যেহেতু তাঁরা চেনেন না, অতএব এইসব লোকের গুরুত্ব নেই।

সেই সত্যিটাই আরও একবার প্রকট হয়ে দেখা দিল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.