অজয় নন্দী
অনেকেরই টুইটার অ্যাকাউন্ট আছে। ইনস্টাগ্রামেও অনেকের অ্যাকাউন্ট আছে। অনেকে নানারকম ছবি পোস্ট করেন। শুভেচ্ছা জানান। নানা বিষয়ে টুকটাক মতামতও জানান। কজন দেখল, কজন লাইক করল, তার ওপর ভিত্তি করে উপার্জনও হয়। তবে তারকাদের অনেকেই উপার্জন নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। তাঁরা মূলত নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক উঁকি মারেন।
কিন্তু এই ব্যাপারটাকে একেবারে ছেলেমানুষির স্তরে নিয়ে গেছেন বিরাট কোহলি। তাঁর সবকিছুতেই ছবি। এবং প্রতিটি মুহূর্ত যেন ছবির জন্যই বাঁচেন। হয়ত জিম করছেন। হয়ত মাঠে প্র্যাকটিস করছেন। কারও সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। চোখ কিন্তু সেই ক্যামেরার দিকেই। কোনও সতীর্থর সঙ্গে হাত মেলালে বা জড়িয়ে ধরলে, সেটাও যেন ছবির পোজ। রান পেলে বা কেউ আউট হলে বিচিত্র সব অঙ্গভঙ্গি। দেখে মনে হবে, ভদ্রলোকের ক্রিকেট এমন ছ্যাবলামির স্তরে কবে নেমে গেল।
যেমন বিরাট, তেমনই তাঁর ভক্তকূল। এ যেন ডিজিটাল এক ঠ্যাঙাড়ে বাহিনি। তাঁর ফলোয়াররা কিংবদন্তিদের অপমান করেন। বোঝাই যায়, বিরাট বেশ পুলকিত হন। কী জানি, বকলমে তিনি নিজেই হয়ত ছদ্মনামে ভক্তি হয়ে ব্যাটিং করেন। ভক্তরা কী সুরে কথা বলবেন, সেই সুর বেঁধে দেন। সম্প্রতি জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে হয়ে গেল ফিটনেস টেস্ট। ইয়ো ইয়ো টেস্টে কার কী স্কোর, সেটা একান্তই বোর্ডের গোপনীয় বিষয়। সেটা নির্বাচকদের কাছে যাবে। দল নির্বাচনের সময় এই দিকটাও মাথায় রাখতে হয়।
বিরাট কোহলি কী করলেন? সেই ইয়ো ইয়ো টেস্টের স্কোর আগাম সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দিলেন। এই রিপোর্ট যে জনসমক্ষে আনতে নেই, এই ন্যূনতম বোধটুকুও নেই! ছবি তোলার নতুন একটা বাহানা পেলেই হল! আসলে, সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর আত্মকেন্দ্রিক একটা প্রজাতি তৈরি হয়েছে। যার সার্থক প্রতিনিধি হলেন এই বিরাট কোহলি। সবসময় একটা অদ্ভুত আত্মরতিতে ভোগেন। ব্যক্তিগত জীবন, ব্যক্তিগত মুহূর্তও জনপরিসরে এনে ফেলেন। আর তারিয়ে তারিয়ে লাইক, কমেন্ট উপভোগ করেন।
কাগজগুলিও তেমনই। হ্যাংলামির এই ছবি ছাপার জন্য তারাও অদ্ভুতভাবে লালায়িত। হ্যাঁ, বিরাট কোহলি একজন সেলিব্রিট। তাঁর স্ত্রীও সেলিব্রিটি। সেলিব্রিটি দম্পতির ছবি কাগজে ছাপা যেতেই পারে। কিন্তু কোথাও তো একটা থামতে হয়। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বালখিল্যের মতো লাগাতার ছবি পোস্ট করে যাবেন। সেগুলি ছাপার বাধ্যবাধকতা নিয়ে ফেলতে হবে মূলস্রোত কাগজকে? এই আদিখ্যেতাকে প্রোমোট করাও কি খুব জরুরি?
যাক, এতদিনে বোর্ডকর্তারা অন্তত বুঝলেন, দলের ভেতরের জিনিস এভাবে বাইরে আনতে নেই। তাই কিছুটা সমঝে দিলেন বিরাটকে। অনেক আগেই এই সতর্ক করা উচিত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে কেউ নিজেকে প্রোমোট করতেই পারেন। কিন্তু প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়কের এই আচরণ যে শোভনীয় নয়, সেটা যে কোথাও একটা দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ, এই বার্তাটুকু সত্যিই দেওয়া দরকার ছিল।
কিন্তু বিরাট কি নিজেকে শুধরে নিতে পারবেন? সম্ভাবনা খুবই কম।