সোহম সেন
নির্বাচকরা কখন কী ভাবেন, কী করে বসেন, বোঝা মুশকিল। কখনও কাউকে ব্রাত্য করে দূরে সরিয়ে দিলেন। আবার কয়েকমাস যেতে না যেতেই মাথায় তুলে নাচতে শুরু করে দিলেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর যেন সেটাই দেখা গেল।
দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। শেষ খেলেছেন, ২০২১ এর ডিসেম্বরে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। তারপর থেকে দেড় বছরে তাঁর কথা ভুলেই ছিলেন নির্বাচকরা। তাঁকে কার্যত ছেঁটেই ফেলা হয়েছিল। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, রাহানের দরজা বোধ হয় চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। যেই না আইপিএলে রান পেলেন, অমনি তাঁর কথা মনে পড়ল নির্বাচকদের। বলা হতেই পারে, শুধু আইপিএল নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমেন্সও মাথায় ছিল। কিন্তু এগুলো হল, নিয়মরক্ষার বিবৃতি। আইপিএলে ভাল না খেললে হয়ত রাহানের কথা মনে পড়ত না। দরজায় কড়া নাড়াই বলুন আর ধাক্কা মারাই বলুন, ওই আইপিএলের পারফরমেন্স দিয়েই সম্ভব হয়েছে। ডাকা হল দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান পুজারাকেও। তিনি অবশ্য আইপিএলের দুনিয়ায় ব্রাত্য। চলে গিয়েছিলেন কাউন্টি খেলতে।
রাহানে–পুজারা দুজনেই ফিরে এলেন। ভাল কথা। রাহানে দু’ইনিংসেই রান পেলেন। পুজারা তেমনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না। এবার দেখা গেল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রাহানে সহ অধিনায়ক হয়ে গেলেন আর পুজারা বাদ পড়ে গেলেন। এই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ভারতের অন্যতম সফল এক অধিনায়ক, সেইসঙ্গে ছিলেন বোর্ড সভাপতি। সৌরভের প্রশ্ন, যে রাহানেকে দেড় বছর নির্বাচকরা ভুলে ছিলেন, তাঁকে রাতারাতি সহ অধিনায়ক করে দেওয়া হল! অন্যদিকে, পুজারার মতো ক্রিকেটার যিনি একশোর বেশি টেস্ট খেলেছেন, তাঁকে যখন খুশি দলে নেওয়া হচ্ছে, আবার না জানিয়েই যখন খুশি বাদ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচকদের খামখেয়ালিপনা নিয়ে যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন সৌরভ। সত্যিই তো, রাহানেকে যদি সহ অধিনায়ক করা যায়, তাহলে দেড় বছর তাঁকে ব্রাত্য রাখা হয়েছিল কেন?
নির্বাচকরা কোন নীতিতে সামনে রেখে দল গড়তে চাইছেন, সেটাই পরিষ্কার নয়। সেইসঙ্গে পুজারা সম্পর্কে নির্বাচকরা কী ভাবছেন, সেটাই অন্তত পুজারার কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। একশো টেস্ট খেলা একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা ঠিক নয়। যদি মনে হয়, পুজারাকে আর দরকার নেই, সেটা সম্মানজনক পদ্ধতিতে হোক। দুম করে বাদ দেওয়াটা খুব একটা শোভনীয় নয়। নির্বাচকরা ঠিক করে নিন, তাঁরা সামনে তাকাতে চান নাকি পেছনে? নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছেন। এটা কাম্য নয়।