মেসিও বোঝেন, বঙ্গীয় সাংবাদিকরা যদি বুঝতেন!‌

মিডিয়া সমাচার

অজয় নন্দী

সেই ছোটবেলায় একটা কথা পড়েছিলাম, কুকুর মানুষকে কামড়ালে সেটা কোনও খবর নয়। কিন্তু মানুষ যদি কুকুরকে কামড়ে দেয়, সেটাই হল খবর।

কিন্তু হালফিলের বাংলা কাগজগুলো দেখলে সেই ধারণা কেমন যেন গুলিয়ে যায়। কোনটা খবর আর কোনটা খবর নয়, তা নিয়ে অদ্ভুত একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়।

উদাহরণ দিতে গেলে শেষ হবে না। সংখ্যা না বাড়িয়ে একেবারে হালফিলের একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রায় সব বাংলা কাগজেই ফলাও করে একটা খবর ছাপা হয়েছে, পরের বিশ্বকাপে মেসি নাকি খেলবেন না। দু দিন ধরে চলছে তার ফলো আপ। এই সুযোগে যে পারছে, একখানা বাইলাইন গুঁজে দিচ্ছে। মেসির দৌলতে যদি আরও একবার নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া যায়!‌

আরে বাবা, কাতারেই যে মেসির শেষ বিশ্বকাপ, এটা নিয়ে সত্যিই কি কোনও সংশয় ছিল!‌ কোপা ফাইনালে হারার পর সেই ২০১৫ তে মেসি অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, দেশের হয়ে আর খেলবেন না। অনেক অনুরোধ, উপরোধে ফিরে এসেছিলেন। দেখতে দেখতে তাও আট বছর পেরিয়ে গেল। ‌তারপর আরও দুটো বিশ্বকাপে খেলা হয়ে গেল। কোপা এসে গেছে। অধরা মাধুরী ছিল বিশ্বকাপ। তাও এসে গেছে। বলি, মেসি কি জয় গোস্বামী নাকি যে সত্তর পেরিয়ে গেলেও কবিতা লিখে যাবেন!‌ মেসি একজন ফুটবলার, যাকে একটা সময় দাড়ি টানতে হয়।

অনেকে ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপেই হয়ত মেসি বিদায়বার্তা দেবেন। ঠিক যেমন শচীন তেন্ডুলকারের ক্ষেত্রে অনেকে ভেবেছিলেন, ২০১১ বিশ্বজয়ের পরই বিদায় বার্তা ঘোষণা করবেন। না, শচীন তখনই বিদায় নেননি। বলা যায়, বিশ্বজয়ের সেই দেশজোড়া আনন্দ ফিকে হয়ে যাক, চাননি। বিশ্বকাপ ছেড়ে সবাই তাঁর অবসর নিয়ে মেতে উঠুক, চাননি। সেই কারণেই অবসর কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছিলেন।

মেসির ক্ষেত্রেও তাই। কাতারেই যদি অবসর ঘোষণা করতেন, আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের উৎসব শোকে বদলে যেত। তাই মেসিও চাননি। কিন্তু এটুকু বিলক্ষণ জানেন, চার বছর পর বয়সটা আরও চার বছর বেড়ে যাবে। তখন আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। এখন যে মেসিকে দলের অপরিহার্য মনে হয়, তখন সেই মেসিকেই বোঝা মনে হবে। মেসি নিশ্চয় ‘‌বোঝা’‌ হয়ে থাকতে চাইবেন না। তাই, চারবছর পরের বিশ্বকাপে তিনি খেলবেন, এটা ভাবাই কষ্টকল্পনা।

মেসি তো সেটাই বলেছেন। ‘‌আমি নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছি। চার বছর পর আর খেলার জায়গায় থাকব বলে মনে হয় না।’‌ এর মধ্যে অভিনবত্ব কোথায়!‌ অর্থাৎ, এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ, এটা নাকি চাঞ্চল্যকর ঘোষণা। কেউ লিখলেন বিস্ফোরক মেসি। এর সঙ্গে বিস্ফোরণের কী সম্পর্ক, কে জানে!‌ এটা নাকি বিশাল খবর। বরং মেসি যদি বলতেন, বয়স যতই হোক, পরের বিশ্বকাপেও খেলবই, তাহলে সেটা একটা ‘‌খবর’‌ হতে পারত।

আসলে, মেসি নিজেও বোঝেন, চার বছর পর খেলব না, এটা কোনও খবর নয়। এখন দেখছি, নিউজ অ্যাঙ্গেলটাও মেসি অন্তত সাংবাদিকদের থেকে ভাল বোঝেন।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.