Categories খেলা

গ্যালারিতে এত হলুদ ঢেউ কেন?‌

সোহম সেন

একেক শহরের নামে দল। অর্থাৎ, সেই দলের হয়ে চিৎকার করবেন সেই শহরের মানুষ। কিন্তু কোথায় বা কী?‌ সব বেড়াজাল যেন একাই ভেঙে দিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

কলকাতা হোক বা দিল্লি, যেখানেই তিনি খেলতে যাচ্ছেন, গ্যালারির রঙ হয়ে উঠছে হলুদ। ভাবা যায়, কলকাতার দর্শকেরা নাইট রাইডার্সের হয়ে গলা না ফাটিয়ে হলুদ জার্সি পরে এসে ‘‌ধোনি–‌ধোনি’‌ চিৎকার করে যাচ্ছেন!‌ সম্ভবত এটাই ধোনির শেষ আইপিএল। তাঁকে ঘিরে একটা আবেগের স্রোত কাজ করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে খোদ ইডেনের মাঠে নাইটের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে!‌ ঘরের ছেলে না রাখলে কী হয়, এবার নাইট কর্তারা বুঝলেন তো!‌

কিন্তু ধোনির নামে এই উন্মাদনা কেন?‌ কারণ, আর দশজনের থেকে তিনি অনেকটাই আলাদা। তাঁকে অহরহ নিজের ঢাক নিজেকে পেটাতে হয় না। তাঁকে প্রতিনিয়ত টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে ভেসে থাকতে হয় না। সবসবময় হ্যাংলার মতো ছবি পোস্ট করে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে হয় না। একটা ম্যাচে রান পেলেই প্রাক্তনদের উদ্দেশে কুৎসিত আক্রমণ করতে হয় না। তিনি জানেন, কীভাবে নিজেকে প্রচারের আলোর আড়ালে রাখতে হয়। তিনি নিঃশব্দে টেস্ট থেকে অবসর নিতে পারেন। তিনি নিঃশব্দে সাদা বলের ক্রিকেটের নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। তাঁর কোনও ফেয়ারওয়েল ম্যাচ লাগে না। তাঁকে লম্বা চওড়া ভাষণও দিতে হয় না। তিনি মাসের পর মাস সেনা বাহিনির ব্যারাকে প্রশিক্ষণ নেন। কেউ জানতেও পারে না। অহরহ ছবি ছেড়ে সেটাকে ইভেন্ট বানাতে চান না।

গোটা গ্যালারি তাঁকে দেখার জন্য উন্মুখ। তাঁর জন্যই গ্যালারি রেঙে উঠেছে হলুদ রঙে। অথচ, তিনি কিনা ব্যাট করতে নামছেন সেই আট নম্বরে। কোনও ম্যাচে সুযোগ পাচ্ছেন এক ওভার। কোনও ম্যাচে এক বা দুই বল। অথচ, চাইলেই তিনি তিনে বা চারে আসতে পারতেন। ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারতেন। সর্বোচ্চ রানের তালিকায় প্রথম তিন–‌চারের মধ্যেই থাকত তাঁর নাম। যদি একদিনের ক্রিকেটে সাত নম্বরে না নামতেন, নামের পাশে হয়ত তিরিশ খানা সেঞ্চুরি থাকত। কিন্তু হেলায় সেসব ছাড়তে পারেন। টেস্ট ছেড়েছেন সেই ২০১৪তে। আর যদি এক বছর খেলতেন, একশো টেস্টের মাইলস্টোনে পৌঁছে যেতেন। হাসতে হাসতে সেইসব প্রলোভনকে উপেক্ষা করতে পারেন।

এইসব ত্যাগের কথা রেকর্ড বইয়ে থাকে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি দৌড়ে কোথাও একটা সেই মানুষটাকে এগিয়ে দেয়। তাই যাঁদের নামের পাশে একশো টেস্ট বা দশ হাজার রান আছে, দিনের শেষে সেই মানুষগুলোকেও কোথাও একটা ছোট মনে হয় এই মহামানবের কাছে।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.