সরকার ঘৃণা ছড়ায়, ক্রিকেট বোর্ডও তাতে শরিক হয়!‌

ধীমান সাহা

ভারতের মাটিতে পাকিস্তান শেষ কবে খেলেছে?‌ অনেক স্মৃতি হাতড়েও মনে করা কঠিন।

পাকিস্তানের মাটিতে ভারত শেষ কবে খেলেছে?‌ এক্ষেত্রেও তাই। অনেক স্মৃতি হাতড়ালেও গত দশ বছরে এমন ঘটনা মনে পড়বে না।

দুই দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক এমন হয়ে গেল কেন?‌ কারণ একটাই। সরকার চায় এই শত্রুতা জিইয়ে রাখতে।

প্রতিবেশী দেশকে কতটা জব্দ করতে পারলাম, কতটা টাইট দিতে পারলাম, এটাই শাসকদেলর সাফল্যের সবথেকে বড় মাপকাঠি। যে কোনও পাড়ার আড্ডায় জানতে চান, কত কর্ম সংস্থান হল, কী শিল্প এল?‌ অমনি উত্তর ভেসে আসবে, পাকিস্তানে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হল!‌ যেমন নির্বোধ সরকার। তেমনই তার সমর্থনকারীরা।

নিজেরা ঝগড়া করে আনন্দ পাচ্ছেন, ভাল কথা। খামোখা ক্রিকেটকে এর মধ্যে টেনে আনা কেন?‌ ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ থাকবে কেন?‌ কেন একটি বিশেষ সরকার আসার পর দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাবে?‌

সম্প্রতি আইসিসি তাদের ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম সামনে আনল। আগামী পাঁচ বছরে ভারত–‌পাকিস্তানের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নেই। অর্থাৎ, না ভারত পাকিস্তানে যাবে। না পাকিস্তান ভারতে আসবে। যতদূর জানা যায়, পাকিস্তানের দিক থেকে সিরিজ খেলতে কোনও আপত্তি নেই। তাদের ভারতে আসতেও আপত্তি নেই। আবার ভারতকে স্বাগত জানাতেও আপত্তি নেই। যত আপত্তি ভারতের।

ভারতীয় বোর্ড এমন পাক বিদ্বেষী কেন হয়ে উঠল?‌ সৌরভ গাঙ্গুলির মতো একজন আইকন বোর্ড সভাপতি। তারপরেও দ্বিপাক্ষিক সিরিজের জট খুলছে না?‌ কাদের খুশি করতে চাইছেন সৌরভ?‌ একটা সময় বলা হত, গাভাসকার আর ইমরানকে আলোচনায় বসিয়ে দেওয়া হোক। তাঁরা কাশ্মীর সমস্যা ঠিক সমাধান করে দেবেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বদলেছে। শচীন সম্পর্কে আমরা যতখানি শ্রদ্ধাশীল, পাকিস্তানের ক্রিকেট অনুরাগীদের শ্রদ্ধা তার থেকে কোনও অংশে কম নয়। ওয়াসিম আক্রাম সম্পর্কে পাক জনতা যতটা মুগ্ধতা, আমাদের মুগ্ধতা কি তার থেকে কোনও অংশে কম?‌

তার পরেও বছরের পর বছর আইপিএলে পাক ক্রিকেটাররা নিষিদ্ধ কেন?‌ এটা চালু হয়েছিল একেবারে ইউপিএ আমলে। তাই তারাও এই বিদ্বেষের দায় এড়াতে পারে না। আর সেই বিদ্বেষকেই আরও বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকার।

ভাবতেও অবাক লাগে, একটা সরকারের একমাত্র অবলম্বন হল ঘৃণা ছড়ানো। জটিল পরিস্থিতির সমাধান করা নয়, কী করে আরও জটিলতা তৈরি করা যায়, তাতেই এদের যত আগ্রহ। আর সেই বিকৃত মনোভাবের শরিক হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডও। সৌরভ গাঙ্গুলির মতো আইকনরাও পরিস্থিতি বদলাতে পারছেন না। বরং সেই পরিস্থিতির শরিক হয়ে পড়ছেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.