কফিনে লাথি! একেই কি বলে সভ্যতা !

‌কুণাল দাশগুপ্ত

অসভ্যতার বেসুরো বৃন্দগান যখন তার সপ্তকে পৌঁছায়, অনেক নিন্দনীয় কূকর্ম আনন্দের সঙ্গে করে ফেলা যায়।
হোয়াটস অ্যাপে একটা ভিডিও নেচেকুঁদে বেড়াচ্ছে। বড় ম্যাচের জয়ী দলের সমর্থকরা পরাজিত দলের লাল-হলুদ কফিনে লাথি মারছে। এমন সবুজ-মেরুন কফিনের সন্ধান অনেক বেশি পাওয়া যেতে পারে ইতিহাসের রাজ্য ঢুকতে পারলে। কিন্তু সেক্ষেত্রে একটা ন্যূনতম শিক্ষার পাসপোর্ট থাকতে হয়। তা তো সবার থাকে না। তারকাটা মস্তিষ্ক নিয়ে, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক উদ্বাস্তু হয়ে গ্যালারি এবং রাজপথে ‘‌নাচে তা তা তাধিয়া’‌ করে পিশাচের নৃত্য করা যায়। তাতে সভ্যতার অন্তর্বাস পরানো যায় না।

ফুটবল বড় আবেগের খেলা। এখানে পা চালাচালি আছে, পা-এর সঙ্গে হাতও। সেটা গ্যালারিতে আসন পেতে বসে গেলেই মুশকিল। ওই ম্যাচে তো তেমন কিছু ঘটেনি। তাহলে লাল-হলুদ পতাকায় লাথি কেন? ওটা তো শতাব্দী প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের মুখে, বুকে কিংবা পেছনে লাথি মারার নামান্তর।

দুই প্রধানের লড়াইয়ে আবেগ থাকবে, ভালবাসা থাকবে, বিদ্রুপ থাকবে। কিন্তু অসভ্যতা, নোংরামি কেন এবং কেন?
ভাবা যায় ১৯৭৫ সালের আইএফএ শিল্ডের পর কত কফিনে কটা লাথি পড়তো!
এক সময়ে এই ক্লাবের সদস্য গ্যালারিতে অসংশোধনীয় শব্দ উচ্চারণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারা অশ্লীল শব্দের বেহাগ গাইছে। তাহলে এরা কারা? ওই সাংস্কৃতিক উদ্বাস্তু নিশ্চয়। ঘটনা হল, যেদিন থেকে জানা গেল যে জাতীয় ক্লাব বিষয়টা স্বর্গের স্বল্পবাস ঊর্বশী, রম্ভা, অপ্সারদের মতোই মিথ্যা। এক পৈশাচিক ঘৃণা বংশবিস্তার শুরু করল এডিশ মসার লার্ভার মতো। ডেঙ্গু কেবলই ডেঙ্গু, মনন, ভাবনা, চিন্তা জুড়ে। আর তারপর থেকেই ছোট বা বড় ডার্বি মানেই সভ্যতার শ্লীলতাহানি।

এটা যদি পরাজিত দল করে? একই রকম শব্দের পারমুটেশন, কম্বিনেশন চলবে। বিনোদন যেন নিধনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। শরীরের মেদ কমানো যায়। কিন্তু মনের মেদ? কমাতেই হবে, না হলে ক্যালেন্ডার জুড়ে ১৬ই আগস্ট ডিস্কো নাচবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.