সোশ্যাল সাইটে যতই ফলোয়ার থাক, আসলে বিরাট বড়ই নিঃসঙ্গ

সোহম সেন

বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে শেষ শতরান কবে এসেছিল?‌

এটি কুইজের একটি প্রশ্ন হয়ে উঠতেই পারে। এতবার লেখা হয়েছে, এতবার নানা মধ্যমে বলা হয়েছে, উত্তরটা প্রায় সবার জানা হয়ে গেছে।

শেষ শতরান করেছিলেন ২০১৯ এর নভেম্বরে। ইডেনে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তখনও করোনা নামক শব্দটা এই দেশের লোক শোনেনি। দেখতে দেখতে আড়াই বছর পেরিয়ে গেল। এই আড়াই বছরে তাঁর ব্যাট থেকে কোনও শতরান আসেনি। শুধু টেস্ট নয়, একদিনের ক্রিকেট, টি ২০ কোনও ঘরানাতেই আসেনি।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে চিহ্নিত করা হত এই বিরাট কোহলিকে। তাঁর ব্যাটে টানা আড়াই বছর রানের খরা!‌ এমনকী তিন তিন বছর ধরে আইপিএলেও এই খরাই চলছে। যে কোনও পারফর্মারের জীবনেই উত্থান পতন আসে। চড়াই উতরাই আসে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে আর কারও ব্যাটে এমন দীর্ঘস্থায়ী খরা চলেছে কিনা জানা নেই। অন্য কেউ হলে কবেই বাদ পড়ে যেতেন। নেহাত তাঁর নাম বিরাট কোহলি। তাই সুযোগের পর সুযোগ দিয়ে চলেছেন নির্বাচকরা। এরই মাঝে ঘটে গেছে অনেক পরিবর্তন। তিন ঘরানার ক্রিকেটেই তিনি আর অধিনায়ক নন। এমনকী আইপিএলের নেতৃত্ব থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন।

কোথায় সমস্যা হচ্ছে বিরাটের?‌ প্রাক্তন ক্রিকেটাররা তাঁদের মতো করে মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু সেসব থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনও সদিচ্ছাই এই তারকা ক্রিকেটারের নেই। সুনীল গাভাসকারের মতো ব্যাটিং কিংবদন্তি প্রায় সব সফরেই ভারতীয় দলের সঙ্গেই থাকেন। ধারাভাষ্যের কাজে তাঁকেও সেই সফরেই থাকতে হয়। একবার গেলেই তিনি বুঝিয়ে দিতে পারেন, কোথায় গলদ হচ্ছে। অথচ, বিরাট কোহলি একটিবারের জন্যও গাভাসকারের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানা নেই। সবথেকে অবাক লাগে, এই গাভাসকারের পরামর্শও নাকি তাঁর কাছে আউটসাইড নয়েজ। অর্থাৎ, বাইরের অবাঞ্ছিত চিৎকার।

ব্যাটে রান নেই। কিন্তু ঔদ্ধত্ব ষোল আনা। সেইসঙ্গে দেখনদারি তো আছেই। তাঁর সবকিছুই এক ইভেন্ট। জিম করলেও ফটোগ্রাফার রেখে ছবি তোলাতে হয়। ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি ছাড়তে হয়। আর বেড়াতে গেলেও ছবি তুলিয়ে পোস্ট। সোশ্যাল মিডিয়াই যেন তাঁর ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেট থেকে ফোকাসটা অনেকটাই নড়ে গেছে। বোলারের কথা যত না ভাবছেন, কোন ছবিটা পোস্ট করবেন, সেই ভাবনাটা বোধ হয় আরও বেশি করে ভাবছেন। মাঠের মধ্যে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি তো আছেই। অনেকে বলেন, এটা নাকি আগ্রাসন। কিন্তু চোখের ভাষাটা ভাল করে পড়ুন। বোঝা যাবে, এটাও ছবি তোলার একটা জবরদস্ত পোজ হিসেবেই তিনি দেখছেন। চোখ সেই ক্যামেরার দিকেই। ঠিক যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নিজের মাকে প্রণাম করতে গেলেও চোখ থাকে ক্যামেরার দিকে।

শো ম্যানশিপ বা দেখনদারি একটা মারাত্মক রোগ। আপাতত এই রোগেই আক্রান্ত এই মহাতারকা। বোঝাই যাচ্ছে, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে যতই ফলোয়ার থাক, আসলে তিনি বড়ই নিঃসঙ্গ। সঠিক বুদ্ধি দেওয়ার লোকের বড়ই অভাব।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.