সমর্থকদের ভোগান্তি ধামাচাপাই পড়ে গেল

সবুজ সান্যাল

খেলা শুরু সাড়ে সাতটায়। একজন সমর্থক কখন মাঠে আসবেন?‌ কেউ আসবেন সাতটায়। কেউ হয়তো তারও আগে, ছটায়। এসে আপনা কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ালেন। আপনি অনলাইনে টিকিট কেটেছেন। কাউন্টার থেকে আপনাকে টিকিট তুলতে হবে। এটাই জেনে এসেছেন। হঠাৎ, আপনি শুনলেন, কাউন্টার থেকে আর টিকিট দেওয়া হবে না। টিকিট নিতে গেলে আপনাকে মোহনবাগান মাঠে যেতে হবে। সেখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।

যেতে অন্তত একঘণ্টা। ফিরে আসতে আরও এখঘণ্টা। সেখানে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে টিকিট পাবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে, কেউ জানে না। আদৌ টিকিট পাবেন কিনা, তাও বলা মুশকিল। এতসব অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে কেউ ছুটলেন মোহনবাগান মাঠে। কেউ বুঝলেন, এত ঝক্কি পোষাবে না। তার থেকে ব্ল্যাকে টিকিট কেটে ঢুকে পড়াই ভাল। এদিক ওদিক ‘‌এক্সট্রা’‌র খোঁজ করতে লাগলেন। কেউ আবার টিকিট কাটার পরেও, টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।

মোহন কর্তাদের দাবি, ফেবসুকে নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেন বাকিদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। কখন মোহনবাগান ফেসবুকে পোট দেবে, কী নতুন পাগলামি করবে, তার সঙ্গে তালে তাল দিয়ে চলতে হবে। হঠাৎ, যুবভারতীর কাউন্টার থেকে সরিয়ে মোহনবাগান মাঠে টিকিট বিলির এই সিদ্ধান্ত কে নিলেন, কখন নিলেন?‌ কর্তারা কথায় কথায় এত প্রেস কনফারেন্স করেন, এতবড় গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার আগে থেকে ঘোষণা করতে পারলেন না!‌

আসলে, এই কর্তারা চমক দিতেই ব্যস্ত। কী জানি, এই তুঘলকি কাণ্ডের মধ্যেও তাঁরা হয়তো ভাবলেন, এই গরমে কেমন চমকটা দিলাম!‌ সুদূর মেদিনীপুর বা পুরুলিয়া বা কৃষ্ণনগর থেকে আসা সমর্থককে এত হয়রানির মধ্যে ফেলে তাঁরা কী আনন্দ পেলেন, কে জানে!‌ এইসব প্রচারলোভী লোকেরা ক্লাবের কর্তা হলে যা হয়, তাই হয়েছে।

অথচ, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পরেও তেমন প্রতিবাদ নেই। মূলস্রোত কাগজে বিষয়টা তেমন জায়গাই পায়নি। সত্যিই তো, প্রেস বক্সের বাতানুকূল কাঁচের ঘরে বসে সমর্থকদের ভোগান্তি আর কতটুকুই বা বোঝা যায়!‌ প্রেস বক্সে বসে সেলফি দিতে হবে। মিনিটে মিনিটে লাইক গুণতে হবে। যাঁরা ছবিতে কমেন্ট করলেন, তাঁদের ‘‌থ্যাঙ্ক ইউ’‌ বলতে হবে। যেন কমেন্টের সংখ্যা দ্বিগুন দেখানো যায়। আসলে, কর্তারাও জানেন, সাংবাদিকরা ফেসবুক করতেই ব্যস্ত থাকবে। সমর্থকদের ভোগান্তি নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। আর জিতে গেলে তো কথাই নেই। সবাই ধন্য ধন্য করে নাচতে থাকবে। সাংবাদিকরাও প্লেয়ারদের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

জয়ের উল্লাসে সমর্থকদের এই ভোগান্তি চাপাই পড়ে যাবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.