অজয় নন্দী
ধরা যাক, তৃণমূলের কোনও সমাবেশ ডাকা হয়েছে। এবং যেমন তেমন সমাবেশ নয়, একেবারে ব্রিগেড সমাবেশ। তার অনেকদিন পর, সেই একইদিনে আইএফএ চাইছে ডার্বি আয়োজন করতে। এখন ডার্বির দিন তো আর দুম করে ঘোষণা করে দেওয়া যায় না। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। সেইদিনে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যাবে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হয়। তারপর ঘোষণা। এখন শাসক দলের ব্রিগেড সমাবেশ আছে, এটা জানার পর সেইদিন পুলিশ কি ডার্বি আয়োজনের অনুমতি দিত? নিশ্চিতভাবেই না।
কিন্তু উল্টোটা যদি হয়! ধরা যাক, আগে ডার্বির দিন ঘোষণা হল। তার অনেক পরে, কোনও এক যুবরাজের খেয়াল হল, তিনি ব্রিগেড ডাকবেন। সেক্ষেত্রে কী হবে? কী আবার হবে? তাঁর তো অনুমতি চাওয়ার কোনও দরকার নেই। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করারও দরকার নেই। তিনি ধরেই নিয়েছেন, তাঁর কথাই আইন। তিনি যেদিন করতে চাইবেন, সেদিনই করবেন। সেইদিন শহরে অন্য কী আছে, সেসব ভাবার দায় তো তাঁর নেই।
হ্যাঁ, পুলিশকে এতখানি তুচ্ছতাচ্ছিল্যই করেন ভাইপো। তিনি জানেন, তাঁর পিসির সরকার। এই সভার অনুমতি দেবে না, পুলিশের ঘাড়ে দুটো মাথা নেই। এবার পুলিশ পড়ল সমস্যায়। কারণ, ডার্বির অনুমতি দেওয়া আছে। দিন ঘোষণাও হয়ে গেছে। এখন ভাইপোকে তো আর বলা যাবে না যে, আপনি ব্রিগেডের ডেট পিছিয়ে দিন। অতএব, দুই ক্লাবের ওপরই চাপটা এল। আপনারা ডার্বির দিনটা অদল বদল করুন। ক্লাবগুলিও অসহায়। না, আমরা ওইদিনই খেলব, এমনটা বলার মুরোদ নেই। থাকার কথাও নয়। দাঁত কেলিয়ে শাসকদলের সভায় হাজির হলে এমন কান মলা তো মাঝে মাঝে খেতেই হবে। আইএফএ থেকে শুরু করে ফেডারেশন, সবাই যেন অসহায়। আগে শাসকদলের মানরক্ষা। তারপর অন্যকিছু।
কখনও শোনা গেল, ডার্বির দিন এগিয়ে যাবে। কখনও শোনা গেল, ভিন রাজ্যে চলে যাবে। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী এমনতি প্রচারের ফুটেজ খেতে সব ব্যাপারেই আসরে নেমে পড়েন। কিন্তু এক্ষেত্রে বুঝতে পারছেন না, কী পরামর্শ দেবেন। যদি তিনি রেগে যান! অতএব, তিনিও মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন। ক্রীড়ামন্ত্রী থেকে ক্রীড়া প্রশাসন, দুই ক্লাব— সবাই কতটা অসহায়, এই একটা সিদ্ধান্ত যেন আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। অবশেষে সমাধানসূত্র বেরোলো। ডার্বি সেইদিনই হবে, সময়টা পিছিয়ে যাবে। এত রাতে দর্শকরা বাড়ি ফিরবেন কীভাবে, তা নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। হচ্ছে, এই ঢের। এর বেশি ভাবতে গেলে জটিলতা বাড়বে বই কমবে না।
দুই ক্লাবের কর্তারা এত কথায় কথায় প্রতিবাদ করেন, চিঠি লেখেন। এক্ষেত্রে কোনও চিঠি নেই, বিবৃতি নেই। ইস্টবেঙ্গলের স্পনসর নাকি মুখ্যমন্ত্রী এনে দেন। মোহনবাগানের নাম নাকি মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে দেন। আইএফএ–র সভাপতির নাম অজিত ব্যানার্জি। মোহনবাগানের ফুটবল সচিবের নাম বাবুন ব্যানার্জি। একজন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা, অন্যজন ভাই। এদিকে, সভা ডেকেছেন ভাইপো। একটা পরিবারের খামখেয়ালিপনা। কিন্তু ভুগতে হবে খেলার মাঠকে। গর্জে ওঠা ময়দান আর বড় বেশি নিশ্চুপ।