রজত সেনগুপ্ত
মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর মানেই কতগুলো চেনা ছবি। একদল বলেন, দারুণ সাড়া পাওয়া গেছে। অনেকেই আসার ব্যাপারে, বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আরেকদল বলেন, সরকারি খরচে আরও একটা ফ্লপ সফর। বেড়ানোই হল, কাজের কাজ কিছুই হবে না।
কিন্তু এবার যেন ছবিটা একটু অন্যরকম। সব চ্যানেল বা সব কাগজের প্রতিনিধি নেই। যাঁরা গেছেন, তাঁদের কাছে এটা বিরাট এক ইভেন্ট। আর যাঁরা যাননি, তাঁদের কাছে এগুলো কোনও খবরই নয়। দুটি মেইনস্ট্রিম কাগজের প্রতিনিধি গেছেন। সেখানে ঢাউস কভারেজ। আর যাঁরা যাননি, সেইসব কাগজে নিতান্তই উপেক্ষা। আনন্দবাজার, এই সময়, বর্তমান— প্রথমসারির তিনটি বাংলা দৈনিকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের খবর নিতান্তই বুড়িছোঁয়া। যে কোনও জেলা সফরে এর থেকে অনেক বেশি কভারেজ থাকে। সাতদিন মিলিয়ে যেটুকু কভারেজ হয়েছে, কলকাতায় একটা নিতান্ত সাধারণ কর্মসূচিতেও তার থেকে বেশি প্রচার হয়।
যাঁরা লোক পাঠিয়েছেন, তাঁরা ভাল করে কভার করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁরা প্রতিনিধি পাঠালেন না, তাঁদের এত কার্পণ্য কেন? এমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য কেন? এখানেই লুকিয়ে আসল প্রশ্নটা। তার মানে কারা যাবেন আর কারা যাবেন না, সেই তালিকা কি অন্য কেউ তৈরি করেছে? সেই কারণেই কেউ দাক্ষিণ্য পেয়ে তৃপ্ত। আবার কেউ সুযোগ না পেয়ে হতাশ!
এই নিয়ে নিতান্ত একটি মামুলি পোস্ট। তার জেরে কিনা থানায় ডেকে জেরা করা হল সন্ময় ব্যানার্জির মতো বর্ষীয়াণ সাংবাদিককে! পুলিশ নিজেকে কোথায় নামাতে চাইছে! সফরকারী সাংবাদিকরা কার অর্থে গেছেন, তা তর্কসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাও স্বচ্ছ নয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও রয়ে গেছে অনেক বিতর্কের ইঙ্গিত। তিনি নিজেই সেখানে এক সভায় গণমাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বলে বসলেন, ‘এত অল্প সময়ে আমরা সবাইকে আনতে পারিনি। সবাইকার টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারিনি।’ তাঁকে টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে কেন? তিনি আনতে পারেননি, একথাই বা বলতে হবে কেন?
আসলে, কিছু কিছু কথা থাকে, যা মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। মাঝখান থেকে সন্ময় ব্যানার্জিদের নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া শুরু হয়ে যায়। যে পুলিশকর্তারা এভাবে একজন সাংবাদিককে হেনস্থা করলেন, তাঁরা বরং মুখ্যমন্ত্রীর ওই ভিডিওটা একবার দেখে নিন। যদি সম্ভব হয়, সন্ময়বাবুর বাড়িতে গিয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে আসুন। যদি অপরাধ কিছুটা লাঘব হয়।