সম্প্রতি বীজপুরে হয়ে গেল নাট্যোৎসব। অংশ নিয়েছিল আঠারোটি দল। যার মধ্যে কাঁচরাপাড়া নাট্য কল্লোল মঞ্চস্থ করে ‘পলাতকা’।
নাটকের প্রধান চরিত্র গ্রামের দোর্দন্ড প্রতাপ শম্ভু চৌধুরী ও তাঁর মেয়ে বিমলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সত্যসাধন দত্ত। যিনি অবসর জীবনে শান্তিতে পড়াশোনা ও লেখালেখি নিয়ে থাকবেন বলেই এই গ্রামে এসেছেন।
বিমলাকে সুশিক্ষিত করতে শম্ভু মেয়ে বিমলাকে সুশিক্ষিত করতে অধ্যাপকের কাছে টিউশন নিতে পাঠাতেন। এরই মাঝে বিমলা এক প্রান্তিক চাষীর ছেলে সঞ্জুর সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। যা অধ্যাপক সত্যসাধনবাবু জানতে পারেন নি। বিমলার খোঁজে অধ্যাপকের বাড়িতে ক্ষিপ্ত শম্ভু চৌধুরী এসে মেয়েকে না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।
এভাবেই একটা বছর কেটে যায়। সন্তান সম্ভবা বিমলা স্বামী সঞ্জু ও শ্বশুর শাশুড়ির সাথে সুখেই সংসার করছিল। আর এই খবর সঞ্জুকে নিয়ে বাপের বাড়িতে জানাতে আসার পরই যত গোলমাল। মুখোশধারী শম্ভু নাতির মুখ দেখার অছিলায় মেয়েকে নিজের কাছে রেখে দিল। এরপর নাতির জন্মের পর সদ্যজাতকে আতুরঘরে ঘুমন্ত মেয়ের পাশ থেকে তুলে নিয়ে এসে বাড়ির চাকর রঘুকে দিয়ে জ্যান্ত কবর দিল। যা এই নাটকে মেয়ে- জামাইয়ের ওপর একজন পিতার প্রতিহিংসা কতটা নৃসংশ হতে পারে তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় কতটা নিচে নামলে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে।
ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে বিমলা পাগলপ্রায় উদভ্রান্ত বিমলা সাহায্যের আশায় অধ্যাপকের কাছে ছুটে আসে। এমনিতেই পালিয়ে বিয়ে করার জন্য বিরক্ত সত্যবাবু প্রথমে পাত্তা ন দিলেও পরে সব শুনে স্তম্ভিত হন। এদিকে সঞ্জুও বিমলার খোঁজে ওখানে এসে হাজির হয়। আবার, অপকর্মের নায়ক শম্ভুও নাতিকে কবর দিয়ে বিমলার সন্ধানে এসে মেয়ে – জামাই দুজনকেই গুলি করে মারতে চায়। ঠিক তখনই চাকর রঘু উদভ্রান্ত হয়ে এসে খবর দেয়, বাবু, পাড়া – প্রতিবেশীরা আপনার খোঁজে এখানে আসছে। সুযোগ বুঝে শম্ভু নিজের হাতের পিস্তল রঘুর হাতে গুঁজে দিয়ে মেয়ে – জামাইকে মারতে বলে। ঠিক তখনই রঘু বিবেকের দংশনে জেগে উঠে তার প্রভুকেই গুলি করতে উদ্যত হয়। ওই কাজে বাধা দেন দিয়ে পুলিশে খবর দিয়ে বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে। এই নাটকের যা বড় শিক্ষা।
এই নাটকের কুশীলবদের প্রত্যেকের অভিনয়ই যথাযথ। প্রযোজনায় কিছু ত্রুটি অবশ্যই আছে, তবে ভবিষ্যতে এই নাট্য গোষ্ঠী নিজেদের ত্রুটি শুধরে নিলে আরও বলিষ্ঠ প্রযোজনার সাক্ষ্য রাখতে পারবে।