গ্রামের মানুষকে এভাবে অপমান আর কতদিন!‌

প্রভাকর দেবনাথ

বহু বছর ধরে একুশে জুলাইয়ের অনুষ্ঠান দেখে আসছি। একটা সময় সরাসরি ধর্মতলা গিয়েও দেখেছি। পরের দিকে আর যেতে পারি না। টিভিতেই দেখি।

শুধু তৃণমূল নয়, যে কোনও দলের বড় সভা হলে সেই সভার সঙ্গে কিছুটা জড়িয়ে যাই। দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা আসেন। বেশ ভালই লাগে। অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেন। কেউ বলেন, কলকাতা ঘুরতে চলে এল। কেউ বলেন, মাছভাত, ডিমভাত খেতে চলে এল। বিভিন্ন চ্যানেলে এই জাতীয় প্রচার চলে। শহুরে পথচলতি মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলেন।

কেন জানি না, খুব রাগ হয়। গ্রামের মানুষের প্রতি এই তাচ্ছিল্য কেন?‌ অনেকে ভালবেসেই আসেন। অনেকে নানা বাধ্যবাধকতায় আসেন। এত কষ্টস্বীকার করে তাঁদের আসতে হয়। এই কষ্টটাকে সম্মান করুন। যাঁরা ভালবেসে আসেন, তাঁদের ভালবাসায় খাদ নেই। তাঁদের অনেকে কিছুই পাননি। কিছুই পাওয়ার নেই। তবুও আসেন। নেশা বলতে পারেন। প্যাশন বলতে পারেন। যাঁরা বাঁকা উক্তি ছুড়ে দেন, তাঁদের এই প্যাশন বোঝার ক্ষমতা নেই।

টিভিতে বলা হয়, নেতারা কী বার্তা দেন, সেদিকে চেয়ে আছেন কর্মীরা। নেতারাও দিব্যি মনের সুখে বার্তা দেন। ভাবেন, কর্মীরা বোধ হয় খুব উজ্জীবিত হলেন। বরং, উল্টোটা। এই কর্মীদের লড়াইটা আরও কঠিন। বিরোধী হলে তো অনেক বেশি কঠিন। এই নেতাদের কী এমন যোগ্যতা আছে যে কর্মীদের বার্তা দেবেন!‌ বরং, কর্মীরাই বার্তা দিয়ে যান, এতকিছুর পরেও সঙ্গে আছি।

এমনভাবে বলা হয়, যেন গ্রামের মানুষ খেতে পায় না। দুটি খাবারের লোভে কলকাতায় আসে। এইভাবে গ্রামের মানুষকে অপমান করার নোঙরা খেলা কবে বন্ধ হবে!‌ এই গ্রামের মানুষেরা না এলে তাঁদের কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত!‌ ঘরে বসে দিব্যি কাটাতে পারতেন। টিভি দেখতে পারতেন। গুলতানি করতে পারতেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারতেন। নিদেনপক্ষে মোবাইল ঘাটতে পারতেন। এক কষ্ট, এত ধকল নেওয়ার কোনও দরকারই ছিল না।

তবুও ওঁরা আসেন। ভালবেসে আসেন। শহুরে লোকেরা এই ভালবাসা দেখাতে পারবেন!‌ এঁরা পাশের বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালেও যান না। কেউ মারা গেলে শ্মশানেও যান না। এমনকী নিজের লোকেরা মারা গেলেও ফেসবুকে স্টেটাস দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। গ্রামের মানুষের লড়াই ও ভালবাসা তাঁরা বুঝবেন কী করে!‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.