স্নেহা সেন
ডাকঘর বললেই মনে পড়ে যায় রবি ঠাকুরের কথা। মনে পড়ে যায় সেই অমল আর দইওলার কথা। মনে পড়ে যায় ক্ষণিকের উপস্থিতিতে মন কেড়ে নেওয়া সুধার কথা।
রাস্তায় রাস্তায় পেল্লাই হোর্ডিং দেখে মনে হয়েছিল, এ বুঝি সেই ডাকঘরেরই অন্য কোনও ভার্সান। নিদেনপক্ষে সেই পোস্টমাস্টার। যেখানে রতন নামের ছোট্ট মেয়েটির জন্য আমাদের মন ব্যকূল হয়ে ওঠে।
এখানেও এক ডাকপিওন আছে। একটা ডাকঘর আছে। একটি ছোট্ট মেয়েও আছে। তবে গল্পের মোচড়টা একটু অন্যরকম। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়েছিল গ্রামের ডাকঘর। চিঠিও আসত না। মানি অর্ডারও আসত না। আর কোনও পোস্টমাস্টারও এই গ্রামের ডাকঘরে কাজ করতে আসত না।
কারণটা খুব সহজ। এই ডাকঘরের লাগোয়া এক আমগাছে গলায় দড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন পোস্টমাস্টার। তারপর দিকে গাঁয়ের লোক আর এ পথ মাড়ায় না। গ্রামজুড়ে জোরদার প্রচার, ওই গাছে ভূত আছে। কেউ গেলেই বিপদ আছে।
সেই গ্রামেই এল নতুন পোস্টমাস্টার। ঘটনাচক্রে সে আবার আগের পোস্টমাস্টারেরই ছেলে। ব্যস, আর যায় কোথায়! দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেল। নাম হয়ে গেল ‘ভূতের ছেলে’। একটু একটু করে আবার চালু হল সেই ডাকঘর। বিলি হতে লাগল পুরনো জমে থাকা সব চিঠি। মানি অর্ডারে টাকাও পৌঁছতে লাগল বিভিন্ন বাড়িতে। কেউ নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে চায়। কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য সম্বন্ধ করতে চায়।
এরই মাঝে প্রেমিকাও জুটে গেল। গ্রামেরই মেয়ে। একটু চাওয়া। একটু একটু করে কাছে আসা। গল্পের মাঝে অপহরণও আছে। কমিক রিলিফও আছে। অনেকটা সেই পঞ্চায়েত ওয়েব সিরিজের মতোই। গ্রাম বাংলার ছোট ছোট হাসি কান্না, মায়া মমতা ধরা দিয়েছে এই ওয়েব সিরিজে। কিছু অকারণ থ্রিলারের আমদানি আছে, গোঁজামেলও আছে। তবু মোটের ওপর সিরিজটি বেশ ভাল। পোস্ট মাস্টারের ভূমিকায় সুহার্তো মুখোপাধ্যায় যেমন ছাপ ফেলেছেন, ডাককর্মী হিসেবে কাঞ্চন মল্লিকও রয়েছেন স্বমহিমায়। দিতিপ্রিয়ার উপস্থিতি এনেছে রোমান্সধর্মী স্বাদ। তবু ওয়েব সিরিজের হাত ধরে শহুরে মানুষ যদি একটু হলেও গ্রামের স্বাদ পান, মন্দ কী?