বিপ্লব গুপ্ত
দিন কয়েক আগের কথা। এটা ওটা ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা বক্তৃতার লিঙ্ক এসে গেল।
এই মানুষটির প্রতি বরাবরই আমার একটু বাড়তি দুর্বলতা আছে। সেটা মূলত তাঁর লেখাপড়া ও বাগ্মীতার জন্যই।
এই ভিডিওটি কোনও প্রশাসনিক সভার নয়। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের একটি অনুষ্ঠান। তারই এক কৃতী ছাত্র হিসেবে ডাকা হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে।
একেবারে অন্য এক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনলাম। ছেলেবেলায় হোস্টেল জীবনের স্মৃতি কী চমৎকারভাবে উঠে এল। ছোটবেলায় কেমন দস্যি দামাল ছিলেন। কেন তাঁর বাবা তাঁকে মফস্বল থেকে হোস্টেলে দিয়ে গেলেন। কী কী দুষ্টুমি করেছেন। কী অকপটে সেইসব স্মৃতি তুলে আনলেন।
এমন ভাল একটা অনুষ্ঠান। কেন জানি না, শুধু নিজে শুনে তৃপ্তি হয় না। ইচ্ছে হয়, অন্যদেরও শোনাই। তাই সংবেদনশীল কিছু মানুষকে পাঠালাম। অন্তত যাঁরা এর মর্ম বুঝবেন।
কিন্তু ভিডিও লিঙ্কের তলায় বেশ কিছু মন্তব্য পড়ে মন সত্যিই খারাপ হয়ে গেল। সেই বিকৃত রুচির আক্রমণ। প্রশাসক আলাপনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে। তাই বলে এমন নিম্নরুচির আক্রমণ? তাছাড়া, এটা তো রামকৃষ্ণ মিশনের অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে তিনি এমন কোনও আপত্তিকর কথা বলেননি যার ভিত্তিতে এমন সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু তারপরেও ট্রোলিং চলতেই থাকল। স্বাধীন মতপ্রকাশের নামে যাঁরা এই লাগাতার অসভ্যতা চালিয়ে গেলেন, তাঁরা সত্যিই স্বাধীন মতপ্রকাশের যোগ্য!
মাঝে মাঝে ভাবি, এই অর্বাচীনেরা আসলে কারা? তাঁরা কি সত্যিই পুরো ভাষণটা শুনেছেন? অধিকাংশই নিশ্চিতভাবে শোনেননি। কারণ, শোনার ধৈর্য থাকলে ওই বিকৃত রুচির আক্রমণ ধেয়ে আসত না। কী জানি, এঁদেরই কেউ কেউ আবার নিজেদের রামকৃষ্ণ মিশনের অনুরাগী বলে দাবি করেন। এঁদেরই কারও কারও ঘরে হয়ত রামকৃষ্ণ–বিবেকানন্দের ছবি টাঙানো।
দু চারটে ভুলভাল, অবাঞ্ছিত মন্তব্য আসতেই পারে। সেটাই উপেক্ষা করাই যায়। কিন্তু এই বিকৃত রুচির মানুষের আধিক্য ঘটে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া নামক চণ্ডীমণ্ডপে। লোককে হেনস্থা করতে এঁদের যত আনন্দ। অন্যকে হেনস্থা হতে দেখেও বোধ হয় এক বিকৃত আনন্দ পাওয়া যায়। সেই বিকৃত আনন্দে সামিল হওয়ার সংক্রমণ দেখে সত্যিই বেশ অবাক হলাম। ধিক্কার জানাই এই মানসিকতাকে। না, আলাপনকে বোঝার কোনও যোগ্যতা এঁদের নেই।