বেসরকারি নিয়োগপত্রও দেওয়ার জন্য সরকারি অনুষ্ঠান!‌ ধন্য প্রশাসন

রক্তিম মিত্র

ধরা যাক, আপনার বাড়িতে আপনি কাজের লোক রাখবেন। কাকে রাখবেন, কত মাইনে হবে, এই সিদ্ধান্তটা কার নেওয়ার কথা?‌ নিঃসন্দেহে আপনার। বা আপনার পরিবারের অন্য কারও।

কিন্তু এবার হয়ত সেই সিদ্ধান্তটাও সরকার নিয়ে ফেলবে। আর সেই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে নেতাজি ইনডোর থেকে।

এমনকী আপনার কাজের লোক দরকার না থাকলেও দেখবেন কেউ একজন নিয়োগপত্র নিয়ে হাজির। তিনি এসে আপনাকে বলবেন, আমাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। কাল থেকে কাজে আসব। এত মাইনে দিতে হবে।

হয়ত অবাক হচ্ছেন। অবাস্তব ভাবছেন। কিন্তু সেই দিন আর দূরে নেই। আপনি না রাখতে চাইলে হয়ত পাড়ার কাউন্সিলর এসে চমকে যাবেন। কোন কোম্পানিতে কে চাকরি করবে, সেই নিয়োগপত্র কিনা সরকার দিচ্ছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে সেই নিয়োগপত্র বিলি করছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী!‌

সরকার নিজে চাকরি দিতে পারছে না। ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। চাকরির ব্যাপারে বছরের পর বছর খোদ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ভুল তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই রাজ্যে নাকি রেকর্ড চাকরি হয়েছে বলে ঢাক পেটাচ্ছে। আর নেতাজি ইনডোরে মেলা করে কোম্পানির নিয়োগপত্র দিয়ে যাচ্ছে!‌

কোন কোম্পানি সরকারকে এই দায়িত্ব দিয়েছে?‌ নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকে। এই সরকার যেন সব সীমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। জেলায় জেলায় আইটিআই কলেজ থেকে বাসভর্তি করে ছেলেদের আনা হল। মুখ্যমন্ত্রী ভীড় দেখতে চান। সরকারি খরচে ভীড় দেখাতে হবে। মাঠে নামামো হল অফিসারদের, জেলাশাসকদের। প্রিন্সিপালদের কার্যত হুমকি দিয়ে বাসভর্তি ছাত্রদের হাজির করা হল নেতাজি ইনডোরে।

সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কী বললেন?‌ যা বলে থাকেন?‌ আসলে, কোন মঞ্চে কোনটা বলতে হয়, আর কোনটা বলতে নেই, এই ন্যূনতম জ্ঞানটুটু যাঁর থাকে না, তিনি যা যা বলতে পারেন। নিজেই নির্লজ্জের মতো নিজের ঢাক বাজিয়ে গেলেন। দশ হাজার লোকের নিয়োগপত্র দিয়ে দিলাম বলে দাবি করলেন। পরে কী দেখা গেল?‌ কেউ ডেলিভারি বয়, কেউ আবার শিক্ষানবিশ। আবার কাউকে বলা হল, দশ হাজার টাকার বেতনে পরেরদিনই গুজরাটে গিয়ে যোগ দিতে হবে।

নিয়োগকর্তা হিসেবে যাঁদের নাম বা ফোন নম্বর দেওয়া আছে, তাঁরা তো আকাশ থেকে পড়লেন। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে তাঁদের এই মর্মে কোনও চুক্তি হয়নি। তাঁদের কোম্পানির নিয়োগপত্র, তাঁরাই জানেন না। বিলি করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

ভাবা যায়!‌ এটা যদি জালিয়াতি বলবেন না!‌ এমন জালিয়াতি কিনা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে হচ্ছে!‌ তাও আবার ঢাকঢোল পেটানো সরকারি অনুষ্ঠানে!‌

এমন একটা নির্লজ্জ ঘটনার পরেও নাগরিক সমাজ কেমন নিশ্চুপ। ফেসবুকে দু একটা খিল্লি, বিদ্রুপ। মূলস্রোত কাগজ বা চ্যানেলে নম নম করে ছুঁয়ে যাওয়া।

বেসরকারি নিয়োগপত্র সরকারি মঞ্চ থেকে এভাবে দেওয়া যায় না, এই মিনিমাম বোধটুকুও মুখ্যমন্ত্রীর নেই!‌ আমলাদের নেই!‌ কাদের নিয়ে চলছে প্রশাসন!‌

নিচুতলাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এই গ্যালারি শো আর জালিয়াতির অনুপ্রেরণা আসছে একেবারে উপর থেকে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.