সোহম সেন
একটা সময় ছিল যখন চিঠি লেখার ব্যাপারে বিশেষ ‘সুনাম’ ছিল মোহনবাগানের। কখনও আইএফএ–কে চিঠি। কখনও ফেডারেশনকে চিঠি। কখনও আবার রাজ্য ও দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে এএফসি বা ফিফাকে চিঠি। সেইসব চিঠি তাঁরা পেতেন কিনা জানি না। পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর আসত না।
সেই চিঠি লেখার রোগে এবার পেয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। তাদের সঙ্গে চিঠিচাপাটি চলে ইনভেস্টরদের। একসময় কোয়েস, পরে শ্রীসিমেন্টস, এখন ইমামি। তবে এই চিঠিচাপাটি আরও ঘোরাল। কারণ এটা শুধু ক্লাব আর ইনভেস্টরের ব্যাপার নয়। এটা মূলত দু পক্ষের আইনজীবীদের চিঠি। ইমামি চিঠি দিল। সেই চিঠি গেল ইস্টবেঙ্গলের কাছে। তাঁরা পাঠিয়ে দিলেন আইনজীবীদের কাছে। আইনজীবীরা কিছু খসড়া সংশোধন করে পাঠালেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা সেটা পাঠালেন ইমামি কর্তাদের কাছে। এবারর ইমামি পাঠিয়ে দিল তাদের আইনজীবীর কাছে। সেই আইনজীবীরা দু–একটা পয়েন্টে আপত্তি জানিয়ে ফের পাঠাল ইমামি কর্তাদের। তারপর আবার সেই একই বৃত্ত। ক্লাব–আইনজীবী–ক্লাব–ইনভেস্টর–আইনজীবী–ইনভেস্টর। মোটামুটি এই চক্রাকারে চলতেই থাকে।
আগের মরশুমে এভাবেই টালবাহানা চলেছিল। বাকি সবাই দল তৈরি করে নিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্যে জুটেছিল বেলাশেষের উচ্ছিষ্ট কিছু পটল মুলো। এবারও জল সেদিকেই গড়াচ্ছে। নবান্নে ইমামি কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক দু’মাস পেরিয়ে গেল। এখনও দুই পক্ষই চিঠিচাপাটির লুকোচুরিই চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, একের পর এক ফুটবলার চলে যাচ্ছেন ভিনরাজ্যে। সত্যিই তো, ক্লাবকর্তারা টালবাহানা করে যাবেন। ফুটবলাররা কার ভরসায় বসে থাকবেন? কেনই বা থাকবেন?
দু’পক্ষ তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। কিছু বিষয় নিয়ে ঐক্যমত্য হবে। কিছু বিষয় হয়ত দরকষাকষির মধ্যে দিয়ে ঠিক হবে। এই তো সহজ ব্যাপার। তারপর দু’পক্ষের চূড়ান্ত আলোচনায় যেটা ঠিক হবে, চুক্তিপত্রে সেটা থাকবে। সেইভাবে ড্রাফট তৈরি হবে। এই তো সহজ একটা ব্যাপার। এটাকে কর্তারা কী কঠিনই না করে তুলছেন। সমর্থকদের ক্ষোভ বা আবেগের কোনও গুরুত্ব এই কর্তাদের আছে বলে মনে হয় না। এঁরা না বোঝেন আবেগ, না বোঝেন ফুটবল, আর না বোঝেন পেশাদারিত্ব।
এরপরেও বছরের পর বছর এই কর্তারাই থেকে যান। আসলে, এই কর্তারা ভাল করেই জানেন, এই সদস্য–সমর্থকদের অধিকাংশই ফেসবুক বিপ্লবী। তাঁরা ফেসবুকে দু–চারটি চিমটি কাটবেন। এর বেশি করার ক্ষমতা এই ফেসবুক বিপ্লবীদের নেই।