কাদের নির্দেশে তদন্তকে ভুল পথে চালনা করছে সিবিআই, তারও তদন্ত হোক

 

রক্তিম মিত্র

বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি মাঝে মাঝেই রেগে যাচ্ছেন। প্রকাশ্যেই সেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁর সেই ক্ষোভ অত্যন্ত সঙ্গত। অনেক আশা নিয়ে তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, রাজ্য পুলিশ যাবতীয় কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপা দিতে চাইলেও সিবিআই হয়ত তার উৎস খুঁজে বের করবে। কিন্তু সিবিআই তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। শুধু সময় নষ্ট করেই চলেছে।

সিবিআই আধিকারিকদের দক্ষতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাঁরা চাইলে কী না পারেন!‌ যেটা সাত বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, চাইলে সাত দিনে তার হেস্তনেস্ত করতে পারেন। তাহলে করেন না কেন?‌ উত্তরটা খুব পরিষ্কার, ওপরওয়ালারা চান না। তাঁরা কেন চান না, সেটাও সহজবোধ্য। যে সিবিআই সারদায় আট বছর লাগিয়ে দেয়, সে সিবিআই নারদায় ছ বছর লাগিয়ে দেয়, তারা যে শিক্ষক নিয়োগ মামলা বা কয়লার মামলাও অনন্ত কাল ঝুলিয়ে রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক। যেটুকু করছেন, তা বিচারপতির ধাঁতানি খেয়ে। আসল অপরাধীকে ধরার তেমন ইচ্ছে আছে বলে অন্তত এখনও মনে হচ্ছে না।

শিক্ষা দপ্তরের আমলাদের ধরা হল। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে ধরা হল। বিভিন্ন শিক্ষাপর্ষদের চেয়ারম্যানদের ধরা হল। প্রথম কয়েকদিন যে দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত চলতে দেখা গেছে, পরের দিকে গতি কেমন শ্লথ হয়ে গেল। কে কোথা থেকে টাকা তুলেছেন, নিচের দিকে খোঁজ শুরু হল। কিন্তু উপরের দিকে সেই অর্থ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, সেদিকে আর নজর পড়ল না। এই অফিসাররা যে দুর্নীতির আসল পান্ডা নন, এঁরা যে বোড়েমাত্র, এটা বুঝতে কোনও গোয়েন্দা হওয়ার দরকার পড়ে না। এমনকী প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বা বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীরও যে বিশেষ ভূমিকা নেই, এটাও একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায়। তাহলে সেই আসল পান্ডার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না?‌ সাদা চোখেই যা দেখা যায়, বোঝা যায়, এত কড়া পাওয়ারের আতশকাচ লাগিয়েও সিবিআই তা দেখতে পাচ্ছে না!‌

অনেক হয়েছে। আরও নির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে দেওয়া হোক। দরকার হলে এই তদন্তকারী অফিসারদের জেলে ভরা হোক। মানিক ভট্টাচার্য বা পার্থ চ্যাটার্জিরা মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে যতখানি প্রতারণা করেছেন, এই সিবিআই কর্তারাই বা কম কী?‌ বিচারপতির ধৈর্যের বাঁধ ভাঙাই স্বাভাবিক। কার নির্দেশে সিবিআই শীতঘুমে চলে যাচ্ছে, সেই পান্ডাদের নামও সামনে আসা খুব জরুরি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.