সব জায়গায় ঘুরেফিরে একটাই আলোচনা, এসআইআর। চায়ের দোকান থেকে লোকাল ট্রেন, অফিসের গুলতানি থেকে ফেসবুকের দেওয়াল। কেউ বলছেন, আমার বাড়িতে বিএলও এসে ফর্ম দিয়ে গেছেন। কেউ বলছেন, ফর্ম পাইনি। কেমন যেন একটা সংশয়। কোথাও আবার চাপা আতঙ্ক। কী জানি, নাম বাদ পড়বে না তো!
যাঁরা পাঁচ প্রজন্ম ধরে এই বাংলাতেই আছেন, তাঁরাও যেন এই আতঙ্কের শিকার। এর পাশাপাশি নানা হুঙ্কার তো আছেই। মোদ্দা কথা, ২০০২ সালে যদি ভোটার লিস্টে নাম থেকে থাকে, তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যদি আপনার নাম না থাকে, আপনার বাবা বা মায়ের নাম থাকলেও চলবে। কিন্তু তারপরেও ভয় যেন পিছু ছাড়ছে না।
শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। অনেক স্মৃতি হাতড়েও সেই এসআইআরের কথা মনে করা মুশকিল। তা নিয়ে এমন বিতর্ক বা এমন হুমকির আবহও ছিল না। ফলে, ভয়ের কোনও প্রশ্নই ছিল না। এবার হঠাৎ ভয়ের আবহ কেন? রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনও দায় এড়াতে পারে না। একটু আগে থেকে ভাবনাচিন্তা করে নামলে হয়তো এই বিতর্ক বা এই আতঙ্ক এড়ানো যেত।
প্রথমত, মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া। এটা সহজেই করা যেত। অনেকেরই মৃত্যু হয় হাসপাতালে। সেই তালিকা হাসপাতাল থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে ও স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে পাঠানো যায়। যাঁদের হয়তো বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে, তাঁদেরও পুরসভা বা পঞ্চায়েত থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিতে হয়েছে। পুরসভা ও পঞ্চায়েততে বলাই যায় যে, প্রতিমাসের আপডেট জেলা প্রশাসনকে জানাতে। জেলা প্রশাসন সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে এই তালিকা পাঠিয়ে দিতে পারে। তাহলেই তো মৃতদের চিহ্নিত করা হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠতেই পারে, পুরসভা বা পঞ্চায়েত যদি সঠিক তালিকা না দেয়! সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একটু কঠোর হতেই পারে।
কারও দু’জায়গায় নাম বা ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করার কাজটাও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আরও মসৃণভাবেই করা সম্ভব। তার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত্য তৈরির চেষ্টা জরুরি। বিভিন্ন দলের মতামত নেওয়া যেত। যুক্তিগ্রাহ্য প্রস্তাব মেনে নিয়ে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে এই অভিযানে নামা যেত। তার বদলে নির্বাচন কমিশন এমন পরিবেশ তৈরি করল, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়াল। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন করছে, তারা নাগরিকত্বের পরীক্ষা নিচ্ছে না, এটা স্পষ্ট করে জানালেই অর্ধেক আতঙ্ক দূর হয়ে যায়। আরও কয়েক মাস আগে এই কাজ শুরু করলে অনেক মসৃণভাবে কাজটা হতে পারত।
যাই হোক, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরিতে সাহায্য করতে সবারই ইতিবাচক ভূমিকা থাকুক। এটা ঝগড়া বা তরজার বিষয় নয়। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার সময়। ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা সকলেরই দায়িত্ব। আসুন, পারস্পরিক দোষারোপ ও কাদা ছোড়াছুড়ি ছেড়ে সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করি।
