অপমান করে সরাতেই বাড়তি আনন্দ পায় এই বোর্ড

সঞ্জীব রায়

বোর্ড নাকি সামনের দিকে তাকাতে চাইছে। ভাল কথা। কিন্তু পুরনোকে এভাবে অস্বীকার করা যায়?‌ একজনের বদলে আরেকজন আসবেন, খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু তার একটা পদ্ধতি আছে। এই বোর্ড কোনও নিয়ম মানে না। পুরনোকে সম্মান জানানো তাদের সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে না।

মনে করে দেখুন, দু’‌বছর আগের বিশ্বকাপের কথা। আমেদাবাদে ফাইনাল। অনেক তারকার সমাগম। কিন্তু ছিলেন না তিরাশির বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কপিলদেব। ছিলেন না ২০১১–‌র বিশ্বজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। যে দুজনের নেতৃত্বে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে, সেই দুই অধিনায়ককেই কিনা আমন্ত্রণ জানানোর সময় পেলেন না বোর্ডকর্তারা!‌ এর থেকেই বোঝা যায়, কোন অর্বাচীন লোকেরা বোর্ড চালাচ্ছেন। এঁদের জন্য কোনও ঘৃণাই যথেষ্ট নয়।

বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো ক্রিকেটারদের টেস্টে এভাবে অবসর নিতে হল?‌ এটা বোর্ডের লজ্জা। এটা নির্বাচকদের লজ্জা। কিন্তু তাঁরা লজ্জিত নন। এবারও অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে হঠাৎ করে রোহিত শর্মাকে সরিয়ে শুভমান গিলকে নেতৃত্বে আনা হল। শুভমানের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। কিন্তু রোহিতকে কি আরেকটু সম্মান দেখানো যেত না?‌ বিশ্বকাপ তো এখনও দু’‌বছর দেরি। এখন থেকে কীসের এত তাড়া?‌ যে রোহিত শর্মা মাত্র কয়েক মাস আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এনে দিলেন, তার কয়েক মাস আগে টি২০ বিশ্বকাপ এনে দিলেন, তারপর এভাবে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার কোনও যুক্তি আছে?‌ না ক্রিকেটীয় যুক্তি, না মানবিক যুক্তি।

যদি বোর্ডের মনে হয়ে থাকে, দু’‌বছর পরের বিশ্বকাপে রোহিত–‌বিরাটদের বাইরে রাখবেন, সেটা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে বোঝানো যেত। তাঁদের সম্মানজনকভাবে সরে যাওয়ার একটা মঞ্চ তৈরি করা যেত। অন্তত তিন ম্যাচের এই সিরিজে রোহিতকে অধিনায়ক রাখাই যেত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই না হয় বিদায়ী ম্যাচ খেলতেন। আসলে, এই বোর্ড ছেঁটে ফেলতে পারলেই খুশি। এই বোর্ড অপমান করে সরাতে বাড়তি আনন্দ পায়। এই বোর্ড ক্রিকেট মাঠে জোর করে রাজনীতিকে টেনে এনে পরিবেশকে আরও কলুষিত করতে আনন্দ পায়।

টাকার দম্ভে এই বোর্ডের মাটিতে পা পড়ে না। তাঁদের হুকুমেই ক্রিকেট বিশ্ব চলবে, এমনটাই তাঁরা ভেবে নিয়েছেন। ক্রিকেটাররা সাফল্যে এনে দিচ্ছেন বলেই এই দম্ভ। অথচ, সেই ক্রিকেটারদেরই এঁরা অপমান করছেন। এই কর্তাদের নাম মুছে যাবে, কিন্তু বিরাট–‌রোহিতদের নাম ইতিহাসে থেকে যাবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *