এঁরা করবেন দুর্গা পুজো!‌

সৃজন শীল

সময়টা ২০১৯। সেবার লোকসভায় ১৯টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। তারপর থেকেই দিবাস্বপ্ন শুরু। রাজ্য নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিলেন, ২০২১–‌এ ক্ষমতায় আসা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কারও কারও আবার একেবারেই তর সইছিল না। তাঁরা পারলে দু’‌তিন মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোট সেরে ফেলার হুঙ্কার দিলেন।

যাই হোক, বিষয় হল দুর্গা পুজো। সেই বছর রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মনে হল, দুর্গা পুজো করলে কেমন হয়!‌ কোথায় হবে?‌ কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গা ইজেডসিসি (‌সল্টলেক)‌ তো আছেই। বেশ ঘটা করে আয়োজন হল। উদ্বোধনে আনা হল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি এসে বিস্তর ভাষণ দিয়ে গেলেন।

পরের বছরের শুরু থেকেই কোভিড–‌হানা। কিন্তু দুর্গা পুজোর আয়োজনে কোনও কার্পণ্য নেই। এবার উদ্বোধক বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।

এবার ২০২১ এর ভোট। ফল যা হওয়ার, তাই হল। ৭৭–‌এ গিয়েই আঁটকে গেল বিজেপি। অমনি পুজো করার নেশা উধাও। আর ভুলেও দুর্গা পুজোর পথ মাড়ালেন না বিজেপি নেতৃত্ব। মাঝে ২০২১ গেল, ২২ গেল, ২৩ গেল, ২৪ গেল। দুর্গার কথা আর মনেও পড়েনি। এবার ২০২৫। আবার মাথায় বায়ু চাপল, দুর্গা পুজো করতে হবে। এবার তাহলে কে উদ্বোধন করবেন?‌

হাজির হয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি একবার খোঁজও নিলেন না, গত চার বছর এই পুজো কেন হয়নি? যাঁরা দু’‌বছর পুজো করে চার বছর বন্ধ রাখেন, তাঁদের পুজোয় কিনা উদ্বোধন করতে হল!‌ সত্যিই, কী দুর্দিন!‌‌ উদ্যোক্তাদেরও বলিহারি। চার বছর পুজো বন্ধ রেখে এবার হঠাৎ করে ইচ্ছে হল পুজো করবেন। এমন খামখেয়ালির পুজোয় কিনা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডেকে আনলেন?‌ একটুও লজ্জা হল না?‌

পুজো মণ্ডপের আশেপাশে নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহর বেশ কিছু বড় বড় কাট আউট। দেবী দুর্গা সেখানে নেহাতই পার্শ্বচরিত্র। সামনের বছর ভোট। যদি আবার বিজেপির ভরাডুবি হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এই পুজো আবার বন্ধ হয়ে যাবে। যাঁরা দুর্গা পুজোকে এমন ছেলেখেলার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন, তাঁরা কিনা হিন্দু ধর্মের স্বঘোষিত অভিভাবক। তাঁরা কিনা হিন্দু ধর্ম নিয়ে ভাষণ দেন। এঁরা নাকি হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা।

একটি দুর্গা পুজো। তাতেই পরিষ্কার, হিন্দু ধর্ম ও দুর্গা পুজো সম্পর্কে এঁদের মনোভাব কী।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *