শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে রমরমিয়ে চলছে ‘ধূমকেতু’। এখনও কোথাও কোথাও ঝুলছে ‘হাউসফুল’ বোর্ড। ছবিটি মুক্তি পেল প্রায় দশ বছর পর। নানা আইনি জটিলতায় ছবিটির মুক্তি থমকেছিল। এত বছর আগের একটা ছবি, তবু পুরনো মনে হচ্ছে না, দর্শকদের একাত্ম হতে সমস্যাও হচ্ছে না।
অথচ, এই ছবি আর দশটা ছবির মতোই শুরুতেই থমকে যেতে পারত। যদি নাম কে ওয়াস্তে দু–একটি হলে দুপুরের দিকে চলত। প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি দেওয়া হলে দর্শকরা যে আজও সেই ছবি দেখতে যান, তার প্রমাণ ধূমকেতু। দেবের অভিনয়, কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনা— এগুলোর নিশ্চয় ভূমিকা আছে। সব বাংলা ছবিই যে দারুণ চলবে, এমনটাও নয়। কিন্তু উপযুক্ত পরিসর পেলে বাংলা ছবিও মানুষকে হলমুখী করতে পারে, সেটা অন্তত বোঝা গেল।
আসলে, কলকাতার বুকেও বাংলা কোথাও যেন ব্রাত্য। সিঙ্গল স্ক্রিন তো আগেই বিদায় নিয়েছে। শহরজুড়ে মাল্টিপ্লেক্সের ছড়াছড়ি। সেখানে বাংলা ছবির জন্য কতটুকু সময়ই বা বরাদ্দ থাকত? হিন্দি বা ইংরাজি ছবি তো ছিলই, ইদানীং সব হলেই চলছিল দক্ষিণ ভারতীয় ছবি। দুপুর দিকে একটা শো হয়তো বরাদ্দ রইল বাংলা ছবির জন্য। বলা হত, দর্শক হয় না, তাই চালানো হয় না। শুরুতেই যেন বাংলা ছবিকে হতোদ্যম করে দেওয়ার চেষ্টা। একটার সঙ্গে একটা জড়িয়ে আছে। হলে বাংলা ছবি মাল্টিপ্লেক্সে না চললে প্রযোজক কেন টাকা ঢালবেন? অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালকরাই বা কীভাবে উৎসাহ পাবেন? বড় বাজেটের ছবি না হলে কলাকুশলীরাও তেমন কাজ পাবেন না। আখেরে ক্ষতিটা হচ্ছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির।
সঠিক সময়েই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হল, এবার থেকে অন্তত একটি হলে বাংলা ছবি চালাতে হবে। অন্য ভাষার বা অন্য সংস্কৃতির ওপর ফতোয়া জারি নয়। হিন্দি চলুক, যে কোনও ভাষার ছবি চলুক, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু একটি হল থাকুক বাংলার জন্য। আর প্রাইম টাইমে যেন বাংলা থাকে। বাংলায় মাল্টিপ্লেক্স চলবে, অথচ একটিও বাংলা ছবি থাকবে না, এটা তো বছরের পর বছর চলতে পারে না। তাই সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োচিত। এই সিদ্ধান্ত মোটেই প্রাদেশিকতা নয়। বরং নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে মেলে ধরার একটা সুন্দর প্রয়াস। এতে বাংলা ছবির দর্শক যেমন বাড়বে, তেমনই ভাল মানের বাংলা ছবি তৈরির উৎসাহও বাড়বে।
নিঃশব্দে আরও একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা হল, নামফলকে বাংলা। কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নামফলকে অন্য ভাষা থাক, আপত্তি নেই, কিন্তু কোথাও একটা বাংলা ভাষাও রাখতে হবে। একই সিদ্ধান্ত হয়েছে নিউটাউনের ক্ষেত্রেও। ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য অনেক মানুষকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। নিজের রাজ্যে বাংলা যেন কোণঠাসা হয়ে না পড়ে, মানুষ যেন গর্বের সঙ্গে বাংলা বলতে পারেন, সেটাও নিশ্চিত করা জরুরি।
