সোহম সেন
একসময় তীব্র হতাশা থেকে লিখেছিলেন, ‘ক্রিকেট, গিভ মি ওয়ান মোর চান্স।’
হতাশা আসাটাই স্বাভাবিক ছিল। টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরির পরেও তিন মাসের মধ্যে টেস্ট দল থেকেই বাদ পড়তে হয়েছিল। একবার বাদ পড়লে ফিরে আসা সত্যিই বেশ কঠিন। সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন করুণ নায়ার। তাঁর সামনে একের পর এক আনকোরাদের অভিষেক হয়েছে। তাঁর দিকে ফিরেও তাকাননি নির্বাচকরা।
যখন ফিরে তাকালে, তখন আট বছর পেরিয়ে গেছে। বাদ যাওয়ার আট বছর পর কামব্যাক! ভারতীয় ক্রিকেটে আর কোনও ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। ইংল্যান্ডগামী বিমানে জায়গা হল। অবশ্য তিনি উড়ে গিয়েছিলেন অনেক আগেই। ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরিও পেলেন। সত্যিই যদি বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা যেতেন, তাহলে হয়তো প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়াটা এতটা মসৃণ হত না। কারণ, রোহিত গেলে লোকেশ রাহুলকে নীচের দিকে পাঠানো হত। মিডল অর্ডারে আরও একটা জায়গা কম। আর বিরাট খেললে তো চার নম্বরে বাঁধা। ফলে, জায়গাটা আরও সঙ্কুচিত হত। এই দুজন না থাকায় অন্তত সুযোগ পাওয়াটা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল করুণের।
তাঁকে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্যই দেখাননি কোচ গৌতম গম্ভীর। লিডসে প্রথম টেস্টে দু’ইনিংসে করলেন ০ ও ২০। পরের টেস্ট বার্মিংহামে। এখানেও সুযোগ দেওয়া হল করুণকে। এবার রান ৩১ ও ২৬। ভারত জিতে গেল। ফলে, অনেককিছুই ধামাচাপাও পড়ে গেল। লর্ডসে কি সুযোগ পাবেন? একটা সংশয় তো ছিলই। দেখা গেল, এবারও তাঁকে সুযোগ দিলেন কোচ গৌতম গম্ভীর ও অধিনায়ক শুভমান গিল। এই টেস্টেও সুবিচার করতে পারলেন না। প্রথম ইনিংসে যদিও বা ৪০ রান করলেন, দ্বিতী ইনিংসে চাপের মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর ব্যাট থেকে এল মাত্র ১৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৯৩ রান। কিন্তু একের পর এক উইকেট পড়ে যাওয়ায় সেই চাপটা হয়ে দাঁড়াল পর্বতপ্রমাণ। একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন রবীন্দ্র জাজেদা। সেই ইনিংসে করুণ যদি একটু সঙ্গ দিতেন, ফল অন্যরকম হতেই পারত।
তবে অন্যরা যেভাবে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন, করুণের ক্ষেত্রে মোটেই তেমনটা ঘটেনি। ধৈর্যে কোনও ত্রুটি ছিল না। প্রায় প্রতিটি ইনিংসেই ভাল বলে উইকেট দিয়েছেন। বোলারকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেননি। তবু ছটি ইনিংসের মধ্যে অন্তত একটি বড় রানের ইনিংস থাকলে ম্যাঞ্চেস্টারে বাদ পড়তে হত না। টানা ছয় ইনিংসে যদি কেউ পঞ্চাশের গন্ডি টপকাতে না পারেন, তাঁকে চতুর্থ টেস্টে সুযোগ দেওয়ার কথা হয়তো কোনও কোচই ভাববেন না। তাই এক্ষেত্রে গৌতম গম্ভীর বা শুভমান গিলদের দায়ী করা যাবে না।
বয়স ৩৩। এই বয়সে বাদ পড়লে আবার ফিরে আসা কঠিন। আট বছর পর একটা সুযোগ এসেছিল। জাতীয় দলের দরজা খুলেও গিয়েছিল। কিন্তু নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না করুণ। আর কি সুযোগ পাওয়া যাবে? সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ। ইংল্যান্ডের এই সফরই হয়তো তাঁর শেষ সফর হয়ে রইল।
