রক্তিম মিত্র
কয়েকদিন আগে ঘুরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এসে নাকি সংগঠনকে চাঙ্গা করবেন। কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করবেন।
রাজ্য বিজেপিতে উদ্দীপনা সত্যিই কম পড়িয়াছে। নইলে, অমিত শাহকে এসে ভাষণ দিতে হয়! আচ্ছা, নেতাজি ইনডোরের সভা থেকে তিনি কী বলবেন? মোদ্দা কথা হল, গত দশ বছর যা যা বলে গেছেন, তারই চর্বিত চর্বন করবেন।
তিনি বলবেন, বাংলায় প্রচুর অনুপ্রবেশ হচ্ছে। তৃণমূল সরকার তাতে মদত দিচ্ছে। গত দশ বছর ধরে তিনি এটাই বলে এসেছেন। হছে, এটা ঘটনা। কিন্তু সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকানোর দায়িত্ব কার? বিএসএফের। যার দায়িত্বে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর বাহিনী যদি অনুপ্রবেশ আটকাতে পারত, তাহলে তৃণমূল সরকার বা রাজ্য পুলিশ ‘মদত দেওয়া’র সুযোগই পেত না।
তিনি বলবেন, কয়লা, গরু পাচার হচ্ছে। হচ্ছে তো। আটকানোর দায়িত্ব কার। তাঁর। তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ বলেই এই কারবার বহাল তবিয়তে চলছে। আচ্ছা, গরু পাচার, কয়লা পাচারের তদন্ত কে করছে? সিবিআই। সেটা কার আওতায়? এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। একটা ক্ষেত্রেও সিবিআই পাঁচ পার্সেন্ট সাফল্য দেখাতে পেরেছে? কারা মাথা, সবাই জানে। কার কার কাছে সেই লাভের সিংহভাগ পৌঁছোয়, সবাই জানে। শুধু সিবিআই জানে না। দু একটা চুনোপুঁটি ধরা হয়। কয়েক মাস যেতে না যেতেই তারা জামিন পেয়ে যায়। আর মাথারা জানে, তাঁদের ছোঁয়ার ক্ষমতা সিবিআইয়ের নেই। সিবিআইকে এমন হাস্যকর জায়গায় কে এনেছেন? এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
চাকরি দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক চাকরিহারা। দুর্নীতির দায় অবশ্যই রাজ্যের শাসকদলের। কিন্তু তদন্তের দায়িত্বে কে ছিল? এক্ষেত্রেও সিবিআই। রাজ্য না হয় যোগ্য–অযোগ্য তালিকা জমা দেয়নি। রাজ্য না হয় প্রমাণ লোপাট করেছে। কিন্তু যারা প্রমাণ লোপাট করল, তাদের কী শাস্তি হল? সিংহভাগ টাকা যার পকেটে গেল, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল? সেই তালিকা সিবিআই আলাদা করতে পারল না কেন? তাহলে, তিন বছর ধরে তারা কী তদন্ত করল? এর থেকে যে কোনও প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি ভাল তদন্ত করত। অমিত শাহ নিশ্চয় শিক্ষা দুর্নীতি নিয়েও সোচ্চার হবেন। কেউ তাঁকে মনে করিয়ে দেবেন, হুজুর, এটা আপনার দপ্তর তদন্ত করছিল। তারা চূড়ান্ত ব্যর্থ। এই দায় আপনার। দয়া করে আপনি বাতেলা দেবেন না।
এই যে অনুব্রত মণ্ডল। আইসি–কে এমন অশ্রাব্য গালাগাল দিলেন। আমরা সবাই রাজ্য সরকারকে, পুলিশকে দুষছি। কিন্তু এই লোকটার তো জেলের বাইরে আসারই কথা নয়। কাদের অপদার্থতায় এই লোকটা জামিন পেল? তদন্তের নামে সিবিআই কী অশ্বডিম্ব প্রসব করল? তিন বছর ধরে অনুব্রতর জবানবন্দি ইংরাজিতে অনুবাদ করার লোক পাওয়া গেল না? এর দায় কার? রাজ্য পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না, এই সত্যিটা তিনি চোদ্দ বছর আগেই জেনে গেছেন। গত ছমাসে বুঝেছেন, সিবিআই–ও তাঁর কিছু করতে পারবে না। তিনি জানেন, গরু, কয়লার ভাগ কোন মহল পর্যন্ত যায়। অতএব, তিনি নির্ভয়।
এরপরেও অমিত শাহ এসে ভাষণ দেবেন। জামাই ষষ্ঠীর দিন জামাই আদর করে বঙ্গ বিজেপি নেতারা তাঁকে বরণ করে নেবেন। টিভিতে দিনভর কভারেজ হবে। কাগজে হেডিং হবে, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন অমিত শাহ।’ যে লোকটার হাতে খাকা সিবিআই দশ বছরে একটা দুর্নীতির কিনারা করতে পারল না, তিনি এই বাংলায় এসে ভাষণ দেবেন? এমন একটা লোক এসে বঙ্গ বিজেপিকে উজ্জীবিত করবেন? বঙ্গ বিজেপি–র প্রতি করুণা ছাড়া আর কীইবা করার আছে?
বঙ্গ বিজেপি যদি সত্যিই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইত, তাহলে নেতাজি ইনডোরের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াত। যাতে লেখা থাকত, অমিত শাহ, গো ব্যাক।