বোর্ড কি আত্মসমীক্ষার জন্য তৈরি?‌

সবুজ সরখেল

সময় বদলে যায়। প্রজন্মও বদলে যায়। ভারতীয় ক্রিকেটে একটা সময় ছিল, যখন ছিল গাভাসকার–‌কপিলদেবদের যুগ। নয়ের দশকে সেই ব্যাটন যেন তুলে নিলেন শচীন–‌সৌরভ–‌রাহুলরা। তারপর এসে গেলেন বিরাট–‌রোহিত। টেস্টে প্রায় দেড় দশক পর থেমে গেল এই জুটি।
বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার পথ চলা মোটামুটি একই সময়ে। তিন ঘরানাতেই দেশের অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। দুজনই ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুজনই ভারতকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। কিন্তু ইংল্যান্ড সফরের আগেই কিছুটা বিনা মেঘেই বজ্রপাতের মতো দুজনেই সরে দাঁড়ালেন। গত বছর টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর দুজনে একইসঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, এই ঘরানায় তাঁরা আর খেলবেন না। টেস্ট অবসরও মোটামুটি এক সপ্তাহের মধ্যেই।
কিন্তু কী এমন ঘটল যে দুজনকে একসঙ্গে এভাবে সরে দাঁড়াতে হল?‌ এটা ঘটনা, রোহিত বা বিরাট আগের ফর্মে নেই। অন্তত সাম্প্রতিক দুটো সিরিজের কথা ধরলে, ব্যর্থই বলা যায়। কিন্তু তাঁরা যে জাতের ক্রিকেটার, তাতে একটা বা দুটো সিরিজ দিয়ে কি তাঁদের মাপা যায়!‌ তাছাড়া, অস্ট্রেলিয়া সফর শুরুই হয়েছিল বিরাটের দুরন্ত শতরান দিয়ে। রোহিতের ফিটনেসে হয়তো একটু সমস্যা আছে। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং দিয়ে সেই ঘাটতি অনায়াসেই পূরণ করতে পারেন। সাম্প্রতিক আইপিএলের কথাই যদি ধরেন, প্লেঅফের আগে পর্যন্ত সাতটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন বিরাট। আর কোনও ব্যাটসম্যানের এই কৃতিত্ব নেই।
সামনে ইংল্যান্ড সফর। পাঁচ টেস্টের সিরিজ। এই অবস্থায় রোহিত–‌বিরাটের মতো অভিজ্ঞরা নেই। এটা ভাবতে গেলেই শিউরে উঠতে হয়। যদি আবার চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়, তার দায় কে নেবেন?‌ কেউই চিরদিন খেলে না। বিরাট–‌রোহিতরাও হয়তো এক–‌দু বছর পর সরেই যেতেন। কিন্তু তাঁদের বিকল্প কারা?‌ বিরাট বা রোহিতের জায়গা নেবেন, চোখে দূরবিন লাগিয়েও এমন কাউকে দেখা যাচ্ছে?‌ শুভমান গিল বা যশস্বী জয়সওয়ালরা এখনও সেই জায়গা থেকে অনেক দূরে।
যে দুজন ভারতীয় ক্রিকেটকে এত গৌরব এনে দিলেন, তাঁদের সঙ্গে বোর্ড বা নির্বাচকদের সমন্বয় থাকবে না?‌ আরও খোলা মন নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত না?‌ তাঁরা কী চাইছেন, বোর্ড কী চাইছে, তা নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট পরিসর ছিল। হঠাৎ দুজনের সরে যাওয়া আর যাই হোক, খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। দুজনই যন্ত্রণা পেয়ে, একবুক অভিমান সঙ্গে নিয়ে সরে গেলেন। বিরাট বা রোহিত এখনই হয়তো সেই ঘটনাকে সামনে আনতে চাইবেন না। কিন্তু একদিন না একদিন ঠিক সামনে আসবে।
বোর্ড বা নির্বাচকরা যদি একান্তই মনে করেন, তাঁরা তারুণ্যের দিকে তাকাবেন, তারও একটা প্রক্রিয়া থাকে। সত্যিই কি এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত না?‌ তাঁদের একটা ফেয়ারওয়েল ম্যাচ দেওয়া যেত না?‌ বিরাট বা রোহিতের এই বিদায় শুধু একরাশ শূন্যতাই এনে দিল না, অনেক প্রশ্নের মুখেও দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেল। কিন্তু বোর্ড কি আত্মসমীক্ষার রাস্তায় হাঁটবে?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.